আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫ ০৩:৩৬ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করল মিয়ানমারের সামরিক জান্তা
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেশটিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বেসামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। তবে বাস্তবতা বলছে, দেশের শাসনক্ষমতা এখনও আগের মতোই সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের হাতে রয়ে গেছে, যিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সামরিক জান্তা বাহিনী এই ক্ষমতা হস্তান্তর করে বলে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় জানানো হয়, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার যে আদেশ জারি হয়েছিল, তা বাতিল করে একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছে, যারা আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন তদারকি করবে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ মূলত কৌশলগত এবং প্রতীকী; মিয়ানমারে প্রকৃত ক্ষমতার ভারসাম্যে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কারণ, ক্ষমতার সবটুকু এখনও সামরিক প্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের হাতেই রয়েছে।
সরকারের মুখপাত্র জ্য মিন তুন জানিয়েছেন, অভ্যুত্থানের পর টানা সাতবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার সেই জরুরি অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা অন্তর্বর্তী প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাস হবে নির্বাচন আয়োজন ও প্রস্তুতির সময়।”
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটি ব্যাপক সহিংসতা ও গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি। সেনাবাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের নামে বহু রক্তক্ষয়ী অভিযান চালিয়েছে, যার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
যদিও সামরিক জান্তা একটি জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে, তবে পশ্চিমা দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, এটি মূলত সেনাশাসন টিকিয়ে রাখার জন্য একটি প্রহসন। সমালোচকরা বলছেন, সেনাবাহিনীর সমর্থিত প্রার্থীরাই নির্বাচনে সুবিধা পাবেন এবং প্রকৃত বিরোধীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
মিয়ানমারবিষয়ক বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন মন্তব্য করেছেন, “এই ক্ষমতা হস্তান্তর মূলত আন্তর্জাতিক মহলকে দেখানোর জন্য। প্রকৃত অর্থে কিছুই বদলায়নি। আগের লোকেরাই নতুন পোশাকে ফিরে এসেছে এবং আগের মতোই দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “তারা কেবল পুরোনো খেলোয়াড়দের নতুনভাবে উপস্থাপন করছে। নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হলেও, তা নিয়ে আমাদের হাতে খুব কম তথ্যই রয়েছে।”
সূত্র: রয়টার্স
ভোরের আকাশ//হ.র