ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৩ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু মিছিল থামছেই না। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৪ হাজার ৩৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অনাহারে নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬৫ জন।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটির আরেকটি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০টি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। এর ফলে আশ্রয় হারাচ্ছে হাজারো পরিবার।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা সিটির ধ্বংসযজ্ঞ আরও তীব্র করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, শহরের আরেকটি বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে দখলদার বাহিনী। এতে গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র দখলের অভিযানে ইসরায়েল এ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি ভবন ধ্বংস করেছে।
মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, গত একদিনে বিভিন্ন হাসপাতালে এসেছে ৬৫ জনের মরদেহ। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৪০৯ জন। এতে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৬ জনে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, অনেক হতাহত এখনো ধ্বংসস্তূপ ও রাস্তায় পড়ে আছেন, যাদের কাছে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারছে না।
এদিকে মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণহানিও বাড়ছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় খাদ্য সংগ্রহে গিয়ে ৩১ জন নিহত এবং অন্তত ১৩২ জন আহত হয়েছেন। ফলে গত ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৪১৬ ফিলিস্তিনি। এ সময় আহত হয়েছেন ১৭ হাজার ৭০৯ জন।
এদিকে আল-রুয়া টাওয়ারে হামলার পাশাপাশি রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) গাজায় আরও অন্তত ৬৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৪৯ জনই ছিলেন গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা। ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে, তারা বাসিন্দাদের সরতে বলার পর ওই ভবনটিতে হামলা চালায়। এতে চারপাশে অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোও পালিয়ে যায়।
ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়া হামলার সময় ঘটনাস্থলের কাছে ছিলেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “অবস্থা ভয়ঙ্কর, চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শত শত পরিবার আশ্রয় হারিয়েছে। ইসরায়েল এভাবে মানুষকে দক্ষিণে সরাতে চাইছে। অথচ সবাই জানে, দক্ষিণেও কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, সেনারা “সন্ত্রাসী অবকাঠামো এবং সন্ত্রাসীদের উচ্চ ভবন” ধ্বংস করছে। তবে আল-রুয়া টাওয়ার ছিল পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ভবন, যেখানে ২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান, একটি ক্লিনিক ও জিম ছিল। এর আগে ইসরায়েল হামলা চালায় আল জাজিরা ক্লাব এলাকায়, যেখানে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর আগে গত শনিবার ১৫ তলা সউসি টাওয়ার এবং গত শুক্রবার ১২ তলা মুশতাহা টাওয়ারে হামলার পর আশ্রয় হারানো পরিবারগুলোর অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। সউসি টাওয়ার ধ্বংসের পর এক পরিবার জানায়, “আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা কিছু নিতে পারিনি। আধা ঘণ্টা পরেই ভবনটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।”
এর আগে গত আগস্টে ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করে। নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনার কারণে ইতোমধ্যেই ১ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
তবে ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইসরায়েল যেখানেই সরতে বলুক না কেন, গাজায় কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই। গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়েছে, গাজা সিটির মানুষ যেন ইসরায়েলের ‘মানবিক নিরাপদ অঞ্চল’ সংক্রান্ত দাবি বিশ্বাস না করে। দক্ষিণের খান ইউনিসের আল-মাওয়াসিকে মানবিক এলাকা ঘোষণা করলেও সেখানে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, “প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিট পরপর গাজা সিটির চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সাবরা, জেইতুনসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণ চলছে।”
তার ভাষায়, ইসরায়েল দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করে আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে। শেখ রাদওয়ান এলাকায় ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ ও সরকারি স্থাপনায় হামলা হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, গাজা সিটির পশ্চিমে আল-ফারাবি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছিল। সেখানে বোমা হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.