আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫ ০৫:১১ এএম
অস্ট্রিয়ার স্কুলে গুলিবর্ষণে নিহত ১১, হামলাকারী সাবেক ছাত্র
গ্রাজ, অস্ট্রিয়া – ১১ জুন: অস্ট্রিয়ার গ্রাজ শহরের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় সময় ১০টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে সাতজন শিক্ষার্থী, দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং হামলাকারী নিজেও রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
গ্রাজ শহরটি ভিয়েনা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। শহরটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। হামলাটি দেশটির ইতিহাসে যুদ্ধবিরতি সময়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অস্ট্রিয়ান পুলিশ জানায়, হামলাকারী ছিলেন ২১ বছর বয়সী একজন সাবেক ছাত্র, যিনি একসময় ওই স্কুলেই পড়াশোনা করতেন। তিনি পিস্তল ও শটগান ব্যবহার করে দুটি ক্লাসরুমে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এক ক্লাস ছিল তার পুরনো শ্রেণিকক্ষ। পরে তাকে স্কুলের একটি বাথরুমে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশ আরও জানায়, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। স্কুলটি খালি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং অভিভাবকদের জন্য নির্ধারিত একটি সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে একটি পুলিশ হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান স্টকার একে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করেছেন। রাষ্ট্রপতি আলেক্সান্ডার ভ্যান ডার বেলেন বলেন, "এই তরুণদের সামনে ছিল একটি সম্ভাবনাময় জীবন—এ ক্ষতি পূরণ অসম্ভব।" দেশজুড়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউরোপীয় নেতারাও এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেইন বলেন, "স্কুল মানেই ভবিষ্যতের প্রতীক—সেখানে সহিংসতা মেনে নেওয়া যায় না।"
অস্ট্রিয়ায় আগ্নেয়াস্ত্রের বৈধতা ও অতীতের হামলা
স্মল আর্মস সারভে অনুসারে, প্রতি ১০০ জনে প্রায় ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, যা ইউরোপে অন্যতম সর্বোচ্চ। যদিও মেশিনগান ও পাম্প-অ্যাকশন গান নিষিদ্ধ, পিস্তল বা রিভলভার ব্যবহারে অনুমোদন নিতে হয়।
অস্ট্রিয়ায় এমন হামলা বিরল হলেও অতীতে কিছু নজির রয়েছে। ২০১৩ সালে এক শিকারি তিন পুলিশ ও এক অ্যাম্বুলেন্স কর্মীকে হত্যা করে। ২০২০ সালে ভিয়েনায় আইএস-সংশ্লিষ্ট বন্দুকধারীর গুলিতে চারজন নিহত হন।
স্থানীয়দের বক্তব্য, "এমন ঘটনা আমরা আমেরিকার খবরেই শুনি, ভাবিনি আমাদের শহরে এমন হবে।" শান্তিপ্রিয় দেশ অস্ট্রিয়া আজ শোক ও হতবাক এক বাস্তবতার মুখোমুখি।
সূত্র: আল-জাজিরা
ভোরের আকাশ।।হ.র