আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩৭ এএম
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের দরজা খুলল আন্তর্জাতিক আদালত
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এক দেশ এখন অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে মামলা করতে পারবে—জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অতীতে কোন দেশ কতটা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করেছে, সেটিও মামলার বিবেচনায় আনা যাবে।
বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে বিবিসির খবরে জানানো হয়, নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত এই যুগান্তকারী রায় দেয়। যদিও রায়টি আইনি দিক থেকে বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বিশ্বজুড়ে প্রভাব হতে পারে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটি এক বড় অর্জন। বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে হতাশ এসব দেশ এখন আইনি পথে ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
এই মামলার সূচনা হয়েছিল ২০১৯ সালে, প্যাসিফিক অঞ্চলের কয়েকজন তরুণ আইন শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী উদ্যোগে। তাদের একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে, যিনি রায় ঘোষণার সময় হেগে উপস্থিত ছিলেন। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের মুহূর্ত। আদালত আমাদের কষ্টকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”
ভানুয়াতুর জলবায়ু অধিকারকর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই রায় শুধু আমাদের নয়, পৃথিবীর সেইসব মানুষের পক্ষে যারা বহুদিন ধরে অবহেলিত ছিলেন।”
আইসিজের বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন রোধে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ না নিলে তা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, এমনকি যেসব দেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি কিংবা তা থেকে সরে গেছে (যেমন—যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রায়ে আরও বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়, তবে সেটির জন্যও ক্ষতিপূরণ প্রযোজ্য হবে। এমনকি, কোনো দেশ যদি নতুন করে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ বা ভর্তুকি দেয়, সেটিও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসঙ্গত হতে পারে।
যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশের আদালতের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে আইসিজেতে মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেমন—যুক্তরাজ্য স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখনো তা করেনি।
এই রায়কে জলবায়ু ন্যায়ের পথে এক বিশাল অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকের মতে, এটি ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক পরিবেশ নীতিতে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
ভোরের আকাশ//হ.র