চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫ ১০:৩৪ এএম
সংগৃহীত ছবি
অবশেষে চালু হলো রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সব সেবা। টানা ১৭ দিন পর এ অচলাবস্থার অবসান হলো। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবার টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের দুটি কাউন্টার থেকে রোগীদের দেড় হাজারের বেশি টিকিট দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের কর্মচঞ্চলে মুখর হয়ে ওঠে হাসপাতাল ভবন। পাশাপাশি রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। বহির্বিভাগ, ওয়ার্ড এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের সেবা দিতে দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। টিকেট কেটে চিকিৎসকের অপেক্ষা আছেন রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়াবাসী মো. লিয়াকত আলী। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, হাসপাতাল চালু হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে অনেক খরচ। আমাদের মতো দরিদ্র মানুষের পক্ষে ওই জায়গায় চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। কিছুটা দুর্ভোগ থাকলেও সরকারি হাসপাতালেই নামমাত্র খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায় সন্তোষ প্রকাশ করেন লিয়াকত আলী।
ফলো-আপ করাতে এসেছেন সাজেদা বেগম। ফার্মগেটের পূর্ব তেজতুরি বাজার এলাকায় তার বাসা। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, দেড় মাস আগে চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছি। ফলো-আপ করানোর সময় চলে গেছে। হাসপাতাল বন্ধ থাকায় অনেক দিন ফিরে গেছি। সরকারি হাসপাতাল এতদিন বন্ধ রাখা উচিত নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাজেদা বেগম।
হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে কথা হয় রোগী মো. আসলামের সঙ্গে। দাদি আজমা খাতুনের চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন। চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসক তাদের ভর্তি করান। মো. আসলাম জানান, ‘দাদির চোখের অস্ত্রোপচার করাতে হবে। মাঝে একবার এসে ফিরে যেতে হয়েছে। আজ সব সেবা চালুর খবর পেয়ে আবার আসি। সব কাগজ জমা দিয়েছি। আসনের ব্যবস্থা হলে নার্স জানাবে বলল, তাই অপেক্ষা করছি।’
গাজীপুর থেকে মায়ের চিকিৎসা করাতে আসেন সাইফুল ইসলাম। আজ চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে আসার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মায়ের চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে। চোখের পরীক্ষা করাতে তারা আরওপি স্ক্রিনিং রুমের সামনে অপেক্ষা করছিলেন।
এর আগে গত ২৮ মে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষ ও মারামারি হয়। এর জেরে দেশের সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।
পরে ৪ জুন হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা (জরুরিসেবা) চালু হয়। আর গত বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা চালু হয়। হাসপাতালের ভেতরে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দেওয়া হচ্ছে। যাদের পরীক্ষার প্রয়োজন তাদের পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
হাসপাতালের ফটকে কর্মরত আনসার ও পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে অন্তত পাঁচজন জুলাই আহত রোগী হাসপাতালে প্রবেশ করতে চেয়েছেন। তারা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা পরিচয় পেয়ে তাদের ভেতরে ঢুকতে দেননি।
মোক্তারুল ইসলাম নামের এক আনসার সদস্য বলেন, ‘আমাদের ওপর নির্দেশনা রয়েছে। জুলাই আহতদের কেউ এলে তাদের আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তাই যারা আসছেন, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, ‘সরকারি আদেশ হলো, এই হাসপাতালে জুলাই আহত আর কোনো রোগীর ভর্তি নেওয়া হবে না। জুলাই আহতদের চারজন রোগী এখনো ভর্তি আছেন। যদিও সরকারের গঠিত কমিটি তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলেছে। আর একজন ভর্তি ছাড়া হাসপাতালে অবস্থান করছেন। আমরা সবাইকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়ার কাজ করছি।’
হাসপাতালে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, জুলাই আহতদের পাঁচজন এখনো অবস্থান করছেন। তবে ভর্তি থাকা চারজন ছাড়া বাকি একজনের খাবার দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও আহতদের চিকিৎসা সমন্বয়ক ডা. যাকিয়া সুলতানা নীলা বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকাল থেকেই সব বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছি। চিকিৎসক ও নার্সরাও কাজ করছেন আগের মতোই। এখন সবকিছু স্বাভাবিক। আশা করছি, আর কোনো বিভ্রান্তি বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে আবার সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ