ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫ ০৯:২৩ এএম
ফাইল ছবি
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি চক্ষু বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট’ এর সেবা থেকে বঞ্চিত দেশের মানুষ। জরুরি বিভাগে জরুরি সেবা চলছে। আবার হাসপাতালে আসা সব রোগীকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে হাসপাতালে আসা অনেক রোগীকে চিকিৎসা ছাড়াই ফেরত যেতে হচ্ছে। ফলে তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগ চালুর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম। গতকাল বুধবার সকাল দশটা থেকে হাসপাতালে অবস্থান করে এই চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল বুধবার সকালে হাসপাতাল ক্যাম্পাস ত্যাগ করছেন রাজধানীর গুলশান কালাচাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন। তিনি ভোরের আকাশকে জানান, জরুরি বিভাগে দেখিয়ের্ছি। অপারেশন করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু এই হাসপাতালে বর্তমানে অপারেশন করানো এবং রোগীকে রাখার ব্যবস্থা নেই। তাই ফিরে যাচ্ছি বলে জানান ফরিদ উদ্দিন।
মো. কাশেম নামে আরেক রোগী এসেছিলেন ফলো-আপ করাতে। মিরপুর মাজার রোডে তার বাসা। তিনি ভোরের আকাশকে জানান, এই হাসপাতালে চোখের অপারেশন করিয়েছি। ফলো-আপ করানোর সময় অনেক আগেই চলে গেছে। বন্ধ থাকার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। বাইরে কোথাও যেতেও সাহস পাচ্ছি না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মো. কাশেম। দুই সপ্তাহ ধরে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালে অচলাবস্থা চলছে। গত ২৮ মে জুলাই আহতদের সঙ্গে সাধারণ রোগী ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষ-মারামারির পর হাসপাতালে সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে যায়। গত ১১ জুন থেকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা (জরুরি সেবা) চালু হয়। কিন্তু এখনো অচলাবস্থা পুরোপুরি কাটেনি।
গতকাল বুধবার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার এই বিভাগ থেকে ৮৬ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৯ রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন জরুরি বিভাগের অধীন ২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগের অধীন চিকিৎসাধীন রোগীদেরও বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিনই কিছু রোগী ভর্তি ও কিছু রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।
সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের অধীন ভর্তি থাকা ২৯ রোগীর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন। জরুরি সেবার প্রয়োজনীয়তা না থাকা রোগীদের হাসপাতাল থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সরা।
মাদারীপুর থেকে আসা মো. ইয়াকুব আলী বলেন, সংঘর্ষের জেরে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হওয়ার ঘটনা তিনি জানেন। সম্প্রতি সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা চালুর খবর পেয়ে চিকিৎসার আশায় তিনি হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
ইয়াকুব আলী বলেন, ‘চোখের যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না। এত দূর থেকে এসেছি। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আগামীকাল কিছু চিকিৎসা চালুর কথা শুনেছি। কোথাও গিয়ে আজকে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসা ছাড়া ফেরত গেলে আবার আসতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার মতো সক্ষমতা আমার নেই।’
জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালে কিছু সাধারণ রোগী এখনো ভর্তি আছেন। তাদের সংখ্যা অন্তত পাঁচজন। গত ২৮ মের পর তারা চিকিৎসার আশায় হাসপাতালে থেকে গেছেন। ঈদের ছুটির আগে হাসপাতালে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৫৪ জন ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই ঈদের আগে বাড়ি চলে গেছেন।
তবে গত মঙ্গলবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কেউ হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে যাননি। সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের ছাড়পত্র দিতে বলেছে। ঈদের ছুটি শেষে তারা আবার হাসপাতালে ফিরে এলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ঠিক কতজন এখন হাসপাতালে অবস্থান করছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি চিকিৎসক ও নার্সরা। যারা এখন আছেন, তারা হাসপাতালের বিশেষায়িত কেয়ার ইউনিটে অবস্থান করছেন। গতকাল বুধবার সকালে গিয়ে প্রবেশ করা যায়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সকালে জুলাই আহতদের একজন এসে পাঁচজনের খাবার নিয়ে গেছেন। হাসপাতালের চতুর্থ তলার বিশেষায়িত এই ইউনিটের ফটকে সকালে গিয়ে দেখা যায়, ভেতর থেকে তালা লাগানো। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে কয়েকজন নার্স ইউনিটে গিয়ে জুলাই আহতদের খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ভেতর থেকে কারও সাড়া না পেয়ে তারা ফিরে যান।
নার্সদের কেউ গণমাধ্যমে তাদের নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। তারা বলেন, গত কয়েক দিন বিশেষায়িত ইউনিটের ভেতরে জুলাই আহতরা তালা লাগিয়ে অবস্থান করছেন। শুধু খাবারের সময় হলে তাদের একজন এসে খাবার নিয়ে যান। সকালে পাঁচজনের খাবার সংগ্রহ করেছেন একজন।
হাসপাতালে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। আনসার সদস্য মোক্তারুল ইসলাম বলেন, যাদের জরুরিসেবা প্রয়োজন, শুধু তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেক রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জুলাই আহতদের বেশির ভাগ বাড়ি চলে গেছেন। তবে তাদের কয়েকজন এখনো হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তারা বিশেষায়িত ইউনিট থেকে বের হন না।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, এ মুহূর্তে জরুরিসেবা চালু আছে। সেখান থেকে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরি সেবা চালু না থাকায় অনেক রোগীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পুরোদমে চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে জানে আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে আমরা বহির্বিভাগ চালু করব। সব ঠিক থাকলে আগামী শনিবার থেকে হাসপাতালের সব সেবা পুরোদমে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ