ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫ ১২:১২ এএম
চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ নিয়ে সুখবর দিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
স্বাস্থ্য খাতে জনবলের সংকট উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম জানিয়েছেন, ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে আগামী মাসেই ৩ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পাশাপাশি ৩ হাজার ২০০ নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “চিকিৎসক সংকট মোকাবিলায় আমরা দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে নার্স নিয়োগের উদ্যোগও বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।”
সরকারের এক বছর মেয়াদি অন্তর্বর্তীকালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম তুলে ধরে নুরজাহান বেগম বলেন, “অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত আইন যুগোপযোগী করার কাজ চলছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস সেবা বিস্তারের উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে সাধারণ মানুষের ব্যয় কমে এবং সেবা পাওয়া সহজ হয়।”
সম্প্রতি উত্তরার একটি দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল জানিয়েছেন, আমাদের চিকিৎসকরা যথাযথ ও নিখুঁত সেবা দিচ্ছেন, যা প্রশংসার যোগ্য।”
তিনি আরও জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে দুই শিফটে চিকিৎসা সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এরই মধ্যে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল সংকট উল্লেখ করে উপদেষ্টা জানান, ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ১৯টি নতুন হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষার মান রক্ষায় কিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ একত্র করা হতে পারে জানিয়ে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত কোনও সমস্যা হবে না।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ প্রতিনিধি ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “আমরা স্বাস্থ্যসেবায় রূপান্তর আনতে চেষ্টা করছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা ১০টি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছি।”
চিহ্নিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে সংযোগহীনতা
২. অতিমাত্রায় কেন্দ্রীয়করণ
৩. প্রাথমিক চিকিৎসায় অবহেলা এবং বিশেষায়নে অতিরিক্ত নির্ভরতা
৪. স্বচ্ছতার ঘাটতি
৫. স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপ্রেরণাহীনতা
৬. নেতৃত্বের অভাব
৭. নৈতিক অবক্ষয়
৮. বিদেশনির্ভরতা
৯. দুর্বল ব্যবস্থাপনা
১০. বাজেট ও পরিকল্পনায় অসামঞ্জস্যতা
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন ১০-১২ হাজার মানুষ মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এজন্য কমপক্ষে ১৫ হাজার নতুন বেডের প্রয়োজন।”
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “সরকার ওষুধের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। আইওটি প্রযুক্তির মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম নজরদারিতে রাখা হবে— ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকলেই সিস্টেমে সংকেত আসবে।”
চিকিৎসকদের জন্য ১২ মাসের ইন্টার্নশিপ বাড়িয়ে ১৮ মাস করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি, যার মধ্যে ৬ মাস গ্রামীণ এলাকায় থাকতে হবে।
তিনি আরও জানান, “চিকিৎসকদের ওষুধ কোম্পানি থেকে উপহার নেওয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক ওষুধের দাম কমেছে এবং গত ৯ মাসে কোনও ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি।”
দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে বলে জানান উপদেষ্টা।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমরা প্রটোকল অনুযায়ী কাজ করছি। যেসব এলাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি, সেখানে বাড়তি ডাক্তার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।”
ভোরের আকাশ/হ.র