সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১১:১৫ পিএম
ইতিহাসের নির্মম সাক্ষী রোহিঙ্গা সিনেমার প্রতিটি ফ্রেম
রাখাইনে জাতিগত বিভেদ বহুকালের হলেও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট। সেইদিন ধার্য ছিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কফি আনানের ‘আনান কমিশন’র প্রতিবেদন দাখিলের দিন। কিন্তু আনান কমিশনের প্রতিবেদন দাখিলের আগেই ঘটে যায় রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোর একাধিক পুলিশ ফাঁড়িতে বোমা বিস্ফোরণ। নিহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
তৎকালীন অং সাং সুচির জান্তাবাহিনী বিতর্কিত এই আক্রমণের দায়ভার রোহিঙ্গাদের কাঁধে চাপিয়ে শুরু করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর বর্বরোচিত অকথ্য অমানবিক নির্মম নির্যাতন। উদ্দেশ্য, রাখাইন অঞ্চলকে রোহিঙ্গা মুক্ত করা। রাখাইন জুড়ে রোহিঙ্গা নিধনে নেপিডো প্রয়োগ করে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা। একদিকে রাখাইনে বন্যা বয়ে যায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর তাজা রক্তে। আরেকদিকে আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভষ্মীভূত করা হয় রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর। গুড়িয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গা জনপদকে। প্রতিষ্ঠিত হয় ভূ-রাজনীতির এক সুস্পষ্ট উদাহরণ।
২০১৭ সালের ২৫ আগাষ্টের পর জীবন বাঁচাতে শুধু প্রাণ নিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী পুরুষ এবং শিশুরা ছুটে আসে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্ত রেখায়। দিশেহারা উদভ্রান্ত নিরন্ন মানুষের হাহাকারে ভারি হয়ে উঠে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে শাহপরী দ্বীপের শূন্যরেখা। নিজ ভূখণ্ড নিরাপদ রাখতে সীমান্তে বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড কড়া পাহারায় নিযুক্ত। অন্য দেশের একজন নাগরিককেও অবৈধ প্রবেশের সুযোগ দিবেনা তারা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিশ্বেও বিভিন্ন মুসলিম দেশসহ জাতিসংঘের অনুরোধে তৎকালীন সরকার প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে সাময়িক প্রবেশের অনুমতি দেয়।
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় উখিয়া জুড়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল গড়ে উঠে। এতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে স্থানীয় জনগণের ত্যাগও অপরিসীম। হঠাৎ এতবড় একটি জনগোষ্ঠীর আগমনের ফলে স্থানীয় স্কুল কলেজ সমূহ বন্ধ থেকেছে দিনের পর দিন। মানুষ তার আবাদি জমি ছেড়ে দিয়েছে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতি স্থাপনের জন্য। সবার ধারণা ছিল হয়ত দু’চার ছয় মাস। কিন্তু না। অতিক্রম হতে চলেছে আটটি বছর। আজও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ফেরতের কোনো সুরাহা নেই। যাহোক এই পটভূমিতেই গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ছবির গল্প। এই ছবিটিতে নিহিত রয়েছে ইতিহাসের নানা উপাদান।
ভোরের আকাশ/এসএইচ