বিনোদন প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫ ১২:১১ পিএম
সংগৃহীত ছবি
‘লালসালু’, ‘চিত্রা নদীর পারে’ সিনেমার পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল পাচ্ছেন ‘মতুয়া রত্ন সম্মান- ২০২৫’ সম্মাননা। মতুয়া সম্প্রদায় নিয়ে ‘মতুয়ামঙ্গল’ নামের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন তিনি। সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসংঘের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর ত্রিকোণ পার্কের নীলপদ্ম অডিটোরিয়ামে তানভীর মোকাম্মেলের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে আগামী ৩১ অগাস্ট।
‘মতুয়া রত্ন’ সম্মাননা পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তানভীর মোকাম্মেল বলেন, প্রতিটা প্রামাণ্যচিত্রের পেছনেই অনেক গবেষণা ও পরিশ্রম থাকে। ‘মতুয়ামঙ্গল’ চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি বরং অন্যান্য অনেক চলচ্চিত্রের চেয়ে কিছুটা বেশিই করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘কারণ আমাদেরকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামে গ্রামে, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়, দণ্ডকারণ্যে, উত্তারাখণ্ডের নৈনিতালে, এমন কী সাগর পেরিয়ে আন্দামানে যেয়েও শুটিং করতে হয়েছিল। মনে হয় আমাদের এত পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে মতুয়া সম্প্রদায় আমাদেরকে এই ‘মতুয়া রত্ন’ সম্মাননাটা দিয়েছেন। পরিশ্রমের স্বীকৃতি পেতে সবারই ভালো লাগে। ‘আমার ও আমার ফিল্ম ইউনিটেরও ভালো লেগেছে। এ পুরস্কারের জন্যে আমি মতুয়া সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাই।’
সম্মাননা নিতে কবে যাচ্ছেন প্রশ্নে মোকাম্মেল বলেছেন, তিনি নিজে সশরীরের যাচ্ছেন না। তার একজন প্রতিনিধি পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে ওই পুরস্কারটা গ্রহণ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ‘আমি আসলে গীতার ওই উপদেশটা খুব মেনে চলি, ‘কর্মেই তোমার অধিকার ফলে নয়’।’
পুরস্কার প্রদানের সে সময়টা খুলনায় ব্যস্ত থাকবেন জানিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘আমি কাজ করে যেতেই ভালোবাসি। পুরস্কার কুড়িয়ে বেড়ানোর সময় ও স্পৃহা আমার তেমন থাকে না। তাছাড়া ওই সময়টা আমি দেশে বেশ ব্যস্ত থাকব। খুলনার দক্ষিণে গ্রামে শিশুদের জন্যে আমি ‘মানবরতন কেন্দ্র’ নামে যে সাংস্কৃতিক স্কুল করেছি বর্ষাকালের এ সময়ে ওই স্কুলের জমিতে আমাদের ফুল ও ফলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ও সময়টা আমি খুলনার গ্রামাঞ্চলে থাকব।’
সিনেমার জন্য এই বিষয়টি বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত মিলে প্রায় দুই কোটি মতুয়া রয়েছে। নিম্নবর্ণের বলে এদেরকে দীর্ঘকাল অবহেলা করা হয়েছে। এদের কথা কেউই তেমন বলে না। একজন শিল্পী হিসেবে আমি মনে করি আমার কাজ হচ্ছে ভাষাহীনদের কণ্ঠে ভাষা যোগানো। যাদের কথা কেউ বলে না তাদের কথা বলা। সে কারণেই আমি এই ‘মতুয়ামঙ্গল’ চলচ্চিত্রটি করতে চেয়েছিলাম।’
মোকাম্মেল আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রটি তৈরি করতে যেয়ে আমি যতই গবেষণা ও মেলামেশার মাধ্যমে মতুয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে পেরেছি ততই মুগ্ধ হয়েছি। মতুয়া ধর্ম খুবই মানবতাবাদী এক ধর্ম। এক পরিশ্রমী জাতির ধর্ম। উচ্চবর্ণের মানুষেরা তাদেরকে নানাভাবে হেয় ও বঞ্চিত করেছে। কিন্তু তারা কখনোই কোনো প্রতিশোধ নিতে চাননি। বরং শিক্ষা ও চেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা তাদের সম্প্রদায়ের উন্নতি ঘটাতে চেয়েছেন। মতুয়াদের এই দিকটা আমার খুবই ভালো লেগেছে এবং ‘মতুয়ামঙ্গল’ প্রামাণ্যচিত্রটা তৈরি করতে পেরে আমি ও আমার ফিল্ম ইউনিট খুবই আনন্দ পেয়েছি।’
‘মতুয়ামঙ্গল’ প্রামাণ্যচিত্রে নির্মাতা তুলে ধরেছেন মতুয়া জনগোষ্ঠীর জীবন ও মতুয়া ধর্মের দার্শনিক দিক। ‘মতুয়ামঙ্গল’ এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের গবেষণামূলক একটা প্রামাণ্যচিত্র। সিনেমার শুটিং বাংলাদেশ ও ভারতে হয়েছে। সিনেমার চিত্রগ্রাহক ছিলেন রাকিবুল হাসান। সম্পাদনা করেছেন মহাদেব শী।
ভাষ্যপাঠে কণ্ঠ দিয়েছেন চিত্রলেখা গুহ। আবহসঙ্গীতে ছিলেন সৈয়দ সাবাব আলী আরজু। শিল্প-নির্দেশক ছিলেন উত্তম গুহ। আর সহকারী পরিচালকেরা ছিলেন রানা মাসুদ, সন্দীপ মিস্ত্রী, অপরাজিতা সঙ্গীতা, ওয়াসিউদ্দীন আহমেদ টিটো ও সোহেল আহম্মেদ সিদ্দিকী। সিনেমাটি তৈরি হয়েছে মতুয়াদের গণঅর্থায়নে।
গত ১২ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। এরপর কিনো-আই ফিল্মসের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পায় মতুয়ামঙ্গল।
ভোরের আকাশ/তা.কা