বিনোদন প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫ ০৯:৫৩ এএম
প্রবাসে কেমন আছেন তারকারা
একসময় তারা দেশের শোবিজের জনপ্রিয় তারকা ছিলেন। কেউ সিনেমায়, কেউ নাটকে, আবার কেউ গানে। তারপর দেশ ছেড়ে থিতু হন প্রবাসে। তারকাদের মধ্যে যারা প্রবাসী হয়েছেন, বেশিরভাগ আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া কিংবা লন্ডনেও আছেন কেউ কেউ।
শাবানাকে বলা হত ‘বিউটি কুইন’। চলচ্চিত্রের অন্যতম সাড়া জাগানো নায়িকা ছিলেন একসময়। অসংখ্য সিনেমা করেছেন। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে তিনি প্রিয়মুখ। এখনো তার অভিনীত সিনেমাগুলো টেলিভিশনে দেখানো হয়। নন্দিত অভিনেত্রী শাবানা দেশ ছেড়েছেন অনেক বছর আগে। ‘বড় আশা করে এসেছি গো জননী কাছে ডেকে লও’ গানটি গেয়ে প্রশংসা ও মানুষের ভালোবাসা - উভয়ই পেয়েছিলেন সংগীতশিল্পী কাদেরী কিবরিয়া। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। একুশে পদকও পেয়েছেন। এই পদকের জন্য তিনি দেশে এসেছিলেন।
এদেশের টেলিভিশন নাটকে দীর্ঘ দিন সুনামের সঙ্গে অভিনয় করেছেন টনি ডায়েস। কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি আবৃত্তির সঙ্গে জড়িয়ে যান। প্রচুর নাটক করেছেন তিনি। পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। তার স্ত্রী প্রিয়া ডায়েস একজন নৃত্যশিল্পী। স্বামী-স্ত্রী মিলে দেড় দশক ধরে আমেরিকায় স্থায়ী হয়েছেন। তাদের একমাত্র কন্যা অহনাও পড়ালেখার পাশাপাশি নাচের সঙ্গে জড়িত সেখানে।
শামীম শাহেদ মঞ্চ-টিভি নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন অনেক বছর। দেশের নামি নাটকের দল নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের হয়ে অভিনয় করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকে তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। তিনিও বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। শামীম শাহেদ বলেন, সৃষ্টিকর্তার রহমতে খুব ভালো আছি। আমেরিকায় রেডিও ত্রিতাল বাংলার সঙ্গে যুক্ত আছেন শাহেদ। সেই সঙ্গে ব্যবসাও করছেন। আবার সিনেমা পরিচালনার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তিনি বলেন, তিনটি সিনেমা পরিচালনা করার প্রস্তুতি চলছে। তিনটিই ইংরেজি ভাষায় নির্মিত সিনেমা হবে। একটি গল্প নিয়েছি বিবিসি বাংলা থেকে। একটি গল্প একজন টেক্সি চালকের।
প্রবীণ অভিনেতা আরিফুল হক কানাডায় স্থায়ী হয়েছেন অনেক বছর ধরে। টেলিভিশন নাটকে একসময় নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি। এছাড়া, অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। আরেক সিনিয়র অভিনেতা কাজী উৎপল আছেন কানাডায়।
ঢাকার সিনেমার সাড়া জাগানো নায়িকা শাবনূর। রেকর্ড-সংখ্যক ব্যবসাসফল সিনেমার নায়িকা তিনি। অনেক বছর ধরে বসবাস করছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
দুই সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন তৌকীর ও বিপাশাও। যদিও তারা বারবার বলছেন, সন্তানের পড়ালেখার জন্যই মূলত সেখানে গিয়েছেন। তাও বেশ কবছর ধরে সেখানে আছেন। তৌকীর আহমেদ বছরে একাধিকবার ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। বিপাশা হায়াত সবশেষ দেশে এসেছিলেন তার বাবা গুণী অভিনেতা আবুল হায়াতের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
নওশীন ঢাকার শোবিজের জনপ্রিয় মুখ। বিশেষ করে উপস্থাপনা করেই তিনি তারকা বনে যান। পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন। তার স্বামী অভিনেতা হিল্লোলও নাটকে ব্যস্ত ছিলেন। দুজনেই আমেরিকায় থিতু হয়েছেন। নওশীন বলেন, ভালো আছি এখানে। খুব ভালো আছি। আমার বড় ছেলে এখানে পড়ালেখা করছে। ছোট্ট কন্যা আছে। তাকে সামলাতে হয়। এখানে তো নিজের কাজ নিজের করতে হয়। সংসার সামলাই। আগে চাকরি করতাম। এখন সংসার ও ব্যবসা করছি।
আরণ্যক নাট্যদলে অনেক বছর অভিনয় করেছেন তমালিকা কর্মকার। সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। একটা সময় অনেক নাটক করেছেন। তার আলোচিত নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’। তিনি বলেন, এখানে অনেক ভালো আছি। প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়। তারপরও ভালো আছি। দূরে থাকলেও এখানে বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। আমরা একত্রিত হই। কখনো আমার বাসায় ঘরোয়া আড্ডার আয়োজন করি। কখনো অন্য কোনো শিল্পীর বাসায় অনুষ্ঠানে যোগ দিই। ভালো লাগে সবাই একত্রিত হওয়ার পর।
ঢাকার শোবিজের দর্শকপ্রিয় তারকা মোনালিসা। বিশেষ করে মডেলিংয়ে দারুণ নাম করেছিলেন তিনি। মডেলিং থেকে নাটকে আসেন। ক্যারিয়ারের সুসময়েই তিনি দেশ ছাড়েন। বাস করছেন আমেরিকায়। তাও অনেক বছর হয়ে গেছে। মাঝে কয়েকবার দেশে এসেছেন। মোনালিসা বলেন, সত্যি কথা বলতে এখানে আমি খুব ভালো আছি। কাজ করছি। সময় কেটে যাচ্ছে। ক্যারিয়ার গুছিয়েছি। তবে, দেশকে মিস করি। মাকে আরও বেশি মিস করি।
সংগীতশিল্পী এসআই টুটুল আমেরিকায় আছেন। অভিনেতা স্বাধীন খসরু আছেন লন্ডনে। টিভি নাটকের তারকা অভিনেত্রী শ্রাবস্তী তিন্নি আছেন কানাডায়। টিভি, নাটক, চলচ্চিত্র ও নৃত্যশিল্পী শ্রাবন্তী আছেন আমেরিকায়।
আফরোজা বানু, ঢাকার মঞ্চে অনেক বছর অভিনয় করেছেন। বিটিভির আলোচিত ‘সকাল-সন্ধ্যা’ নাটকে শিমু চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত ছিলেন। অনেক সফল নাটকের এই অভিনেত্রী এখন আছেন কানাডায়। সেখানেই আবাস গড়েছেন। কানাডায় থেকেও মঞ্চ নাটক করছেন তিনি।
নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী, মডেল নোভা অভিনীত সবশেষ চলচ্চিত্র ‘মৃধা বনাম মৃধা’। এই সিনেমাটি খুব প্রশংসা কুড়ায়। নোভা দুই বছরের কিছু বেশি সময় ধরে আমেরিকায় পাড়ি জড়িয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের বাইরে থাকলেও কালচারাল অনুষ্ঠান থেকে পুরোপুরি দূরে নেই। এখানেও কিছু কিছু কাজ করছি। সম্প্রতি বড় একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি। এছাড়া, এখানে একটি ব্যবসাও শুরু করেছি। অনেক পরিকল্পনা আছে।
অন্যদিকে ক্লোজআপ-খ্যাত সংগীতশিল্পী সোনিয়া আছেন কানাডায়। মঞ্চ ও টিভি নাটকের অভিনেত্রী সাবিনা বারী লাকী স্থায়ী হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। হুমায়ূন আহমেদের নাটকে একসময়ে নিয়মিত অভিনয় করেছেন মাজনুন মিজান। তিনিও অস্ট্রেলিয়ায় আছেন।
ঢাকা থিয়েটারের সদস্য এবং টিভি নাটকের অভিনেতা খায়রুল ইসলাম পাখি স্থায়ী হয়েছেন আমেরিকায়। অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন বসবাস করছেন আমেরিকায়।
সাবেক লাক্স-তারকা বিন্দু ঢাকার শোবিজের জনপ্রিয় তারকা ছিলেন। তিনি পাড়ি জড়িয়েছেন আমেরিকায়। নৃত্যশিল্পী, মডেল ও অভিনেত্রী রিয়াও আছেন আমেরিকায়। রোমানা নাটক-মডেলিং ও সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনিও অনেক বছর ধরে রয়েছেন আমেরিকায়। চিত্রনায়িকা তামান্না আছেন সুইডেনে। একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইমরান আছেন সুইডেনে। সাবেক লাক্স সুন্দরী মিলা হোসেন এখন আমেরিকায়। ‘বিপ্রতীপ’ নাটকে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া অভিনেত্রী অগ্নিলা রয়েছেন কানাডায়।
টেলিভিশন নাটকের একসময়ের সফল অভিনেত্রী লুৎফুন নাহার লতা আছেন আমেরিকায়। গুণী অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেন দীর্ঘ দিন আমেরিকায় ছিলেন। তিনি কানাডায় ছেলের বাসায় বেড়াতে গিয়ে মারা যান। তার স্ত্রী অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেন আছেন আমেরিকায়। টিভি নাটকের তারকা অভিনেত্রী রিচি সোলায়মানও আছেন আমেরিকায়।
ভোরের আকাশ/আজাসা