ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫ ০৭:১০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বছর জুড়েই চলছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন। দীর্ঘ সময়েও পূরণ হয়নি তাদের পাঁচ দফা দাবি। দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে- জাতীয়করণ, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা। ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষকরা।
সমাবেশ শেষে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। পরে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা স্থগিত করে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। পরবর্তীতে দাবি না মানলে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর অর্ধদিবস, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ১২ অক্টোবর থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন হাজারো শিক্ষক। সমাবেশস্থল প্রেস ক্লাব শিক্ষকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। উপস্থিত হন কেন্দ্রীয় নেতারা। জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ও শিক্ষা ভবন এলাকাতেও অবস্থান নেন অনেক শিক্ষক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে শিক্ষকরা প্রেস ক্লাবে আসতে থাকে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা আন্দোলন চালিয়ে যান। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষকরা ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’ এর ব্যানারে এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশের এক পর্যায়ে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেয় ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’। এই পদযাত্রা ঠেকাতে বড় প্রস্তুতি নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অদূরেই শিক্ষা ভবন মোড়। সেখানে ব্যারিকেডসহ পুলিশের শতাধিক সদস্যকে দেখা গেছে। শিক্ষা ভবন থেকে সচিবালয়ের দিকের রাস্তায় সাজিয়ে রাখা হয় জলকামান, এপিসি কার। তার কিছুটা দূরে সচিবালয় লিংক রোডের দুই পাশে পুলিশের ব্যারিকেড ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই পথ দিয়ে সাধারণ কোনো মানুষকে যেতে দেওয়া হয়নি। সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের একজন সদস্য বলেন, সচিবালয় রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কেউ চাইলেই সেখানে মিছিল নিয়ে, শত শত মানুষ নিয়ে যেতে পারে না। এই পথে কেউ মিছিল নিয়ে এলে তাকে আটকে দেওয়া হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবিগুলো জানিয়ে আসছি। ২০১৮ সালে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টাও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি নেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। অথচ আমরা বছরের পর বছর বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে আমরা একযোগে দাবি তুলে ধরব এবং প্রয়োজনে সচিবালয় পর্যন্ত পদযাত্রা করব। এটা শুধু একটি কর্মসূচি নয়, বরং ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। আমরা চাই সরকার অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিক। যদি এবারও দাবি পূরণ না হয়, তবে আমরা আরও বৃহত্তর ও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হব। পরবর্তীতে সচিবালয়মুখী আন্দোলন থামিয়ে শিক্ষকদের ১২ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি.আর. আবরারের সঙ্গে দেখা করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন, সব দাবি একবারে পূর্ণ করা সম্ভব নয়। এই দাবিগুলোর পূরণে কি পরিমাণ অর্থ লাগবে তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে।
আজিজী বলেন, আমরা প্রস্তাব রেখেছি আমাদের বাড়ি ভাড়া পার্সেন্টেজ হিসেবে বাড়াতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় চিকিৎসা ভাতা ৫০০ থেকে ১০০০ করার কথা বলেছে, আমরা এই বিষয় নিয়ে বেশি কিছু বলিনি। আমরা বাড়ি ভাড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য আরও বলেন, যদি ডিউ লেটার পাঠানো না হয়, তাহলে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে ১৪ সেপ্টেম্বর সারা বাংলাদেশে প্রতিটি এমপিওভুক্ত স্কুল-মাদরাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করব এবং ১৫-১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। তারপরও যদি দাবি মানা না হয়, তাহলে ১ মাস অপেক্ষা করে ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ