ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
অটোমোবাইল, এগ্রো-মেশিনারি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত বাংলাদেশের শিল্পখাতের সম্ভাবনা ও সক্ষমতাকে তুলে ধরছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, এই সেক্টরগুলো আমাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। যা দেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘অটোমোবাইলস অ্যান্ড এগ্রো-মেশিনারি ফেয়ার ২০২৫- রোড টু মেড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুইদিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ড. এম আবু ইউসুফ, কৃষিপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা আলিমুল এছান চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাক।
বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার মেড ইন বাংলাদেশ উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে মেড ইন বাংলাদেশ হিসেবে যে পণ্যগুলো আসছে তাকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এ ব্র্যান্ডকে একটি বিশ্বমানের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে। এজন্য প্রয়োজন উৎপাদন ভিত্তিক শিল্পের বিকাশ, প্রযুক্তির স্থানান্তর, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং দক্ষ মানব সম্পৃণ গড়ে তোলা। এ মেলা অত্যন্ত সময় উপযোগী এবং দেশের শিল্পখাতের সম্ভাবনা ও সক্ষমতাকে তুলে ধরবে। মেলার মাধ্যমে শিল্পখাত আরো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাবে।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের তিনটি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত সেক্টর হল অটোমোবাইলস, এগ্রোমেশিনারি এবং লাইট ম্যানুফ্যাকচারিং। এগুলো আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের বিকাশ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জাতীয় শিল্পনীতির উদ্দেশ্য দেশীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। যেটা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ইতোমধ্যে বিভিন্ন নীতি সহায়তা ট্যাক্স সহায়তা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার সেই কাজটি এগিয়ে নিচ্ছে।
শিল্প উপদেষ্টা আরো বলেন, এই মেলার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য হলো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে বিশ্বমানের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এজন্য প্রয়োজন উৎপাদনভিত্তিক শিল্পের বিকাশ, প্রযুক্তি স্থানান্তর, গবেষণা ও উদ্ভাবন, এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। আমরা বিশ্বাস করি এ মেলার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে এবং নতুন ব্যবসায়িক সম্মাননার শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিসিআইসি বিএসআইসি ইএসটিআই এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এ খাতগুলোকে সহায়তা প্রদান করছে। এ মেলা শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাজকে আরো বেশি সহযোগিতা করবে এবং এ খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে জাতি হিসেবে আমরা গঠিত হবো, যা আমাদের তরুণ সমাজ আমাদের ছাত্র জনতা চব্বিশ এ দেখিয়েছেন জনগণের শক্তি কি ধরনের অজয়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের এ দায়িত্বটি এখনই শুরু করা আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, অটোমোবাইল, এগ্রো-মেশিনারি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। শিল্প সমৃদ্ধ দেশ ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, অটোমোবাইলস ও এগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রিজ- এই দুই খাতকে প্রমোট করার জন্যই এ আয়োজন করা হয়েছে। লাইট ইন্ডাস্ট্রিজ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সাসটেইনেবল ইকোনমির জন্য এখনো আমরা প্রস্তুত হইনি। তবে ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেওয়া লাগবে। গার্মেন্টস, এগ্রিকালচার ও রেমিট্যান্স- এই তিনটি খাত আমাদের অর্থনীতিকে সচল করছে। ৮৩ শতাংশ রপ্তানি আয় গার্মেন্ট খাত থেকে আসছে।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার ব্যাংকিং সেক্টরে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করছে। রেমিট্যান্সের গ্রোথ প্রতি মাসেই ইতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে। আর অর্থ পাচারো বন্ধ করতে পেরেছে সরকার। এ উন্নতিগুলো অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক আনবে বলে মনে করি।
কৃষিপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা আলিমুল এছান চৌধুরী বলেন, আমরা যারা আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি তৈরি করি তাদের জন্য সরকার সুন্দর নীতিমালা দিলে আমরা এই সেক্টরকে অনেকদূর এগিয়ে নিতে পারবো। আমাদের দাবি হচ্ছে, আমাদের ব্যবসা মৌসুম ভিত্তিক, কৃষি মেশিনের ফলে অল্প সময়ে প্রডাক্টিভিটি বাড়ছে। আমাদের সরকার থেকে স্পেশাল বরাদ্দ ও কম সুদে লোন সহজ করলে আমরা দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারবো।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক অর্থনীতিবিদ ড. এম মাসরুর রিয়াজ তার উপস্থাপনায় তথ্য-উপাত্তসহ অটোমোবাইল, এগ্রো-মেশিনারি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের বর্তমান অবস্থা, প্রবৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ করণীয় তুলে ধরেন। শিল্প উপদেষ্টা মেলার উদ্বোধন করে অংশগ্রহণকারী স্টল ঘুরে দেখেন এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা নিয়ে এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট আছে। স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার এবং খাতটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়। আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে তা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বে এগ্রিকালচার মেশিনারি খাতের বাজার ১ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি ডলারের। বাংলাদেশ এখনো সেই বাজারে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। স্থানীয় বাজারেই হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা প্রায় ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এর অর্ধেকও আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, অটোমোবাইল শিল্পের উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব। দেশে ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে মুক্ত বাজার শুরু হয়েছিল। দেশেই পণ্য তৈরি করতে হবে। কারণ ২০২২ সালের জুনের পর থেকে দেশে ডলার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এরপর আমদানিতে নানা রকম কঠোরতা আরোপ করা হয়। বর্তমানে বাইরে থেকে অটোমোবাইল আমদানি করতে হচ্ছে, তাতে আমদানির ওপর চাপ তৈরি করছে। ডোমেস্টিক ইকোনমি দিন দিন বড় হচ্ছে। আর মার্কেট বড় করতে চাইলে দেশেই অটোমোবাইল খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া লাগবে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তা দেওয়া লাগবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ