অর্থনীতি ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫ ০৩:১৭ এএম
দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠনে সরকারি অর্থ, জনগণের আমানত নিরাপদ থাকবে: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর
দুর্বল হয়ে পড়া পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত (মার্জার) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিতর্কিত শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের আর্থিক অনিয়মের কারণে বিপর্যস্ত ব্যাংকগুলো পুনর্গঠনে সরকারের পক্ষ থেকে বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই–ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, “মার্জারে আসা ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে এক ধরনের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে। এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতে লাভজনক হবে বলেই আমরা আশাবাদী।” তিনি আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি ব্যাংকের মার্জার সম্পন্ন হবে, এবং আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই ধাপ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু ব্যাংককে মার্জারে আনা হবে।
২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেসময় মার্কিন সরকারও ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স খাতে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছিল, যা পরবর্তীতে লাভসহ ফেরত পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও একই ধরনের জনস্বার্থভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, এক বছর সময় দিয়ে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছু ব্যাংক পুনরুদ্ধারে সফল হলেও কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে মার্জার অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচনের পর দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও অনুকূল হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।”
টাকা পাচার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর জানান, এই প্রবণতা বর্তমানে অনেকটাই কমেছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়। এ লক্ষ্যে কিছু দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই–ডিসেম্বর) জন্য ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে নীতিগত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। যদি মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসে, তখন নীতিগত সুদের হার হ্রাস করা হতে পারে।
এছাড়াও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭.২ শতাংশ এবং আগামী জুন পর্যন্ত ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত জুনে ঘোষিত পূর্ববর্তী মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্য ছিল ৯.৮ শতাংশ, তবে অর্জন ছিল মাত্র ৬.৪ শতাংশ।
ভোরের আকাশ//র.ন