ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫ ০৮:৪৮ পিএম
কলম বিরতিতে রাজস্ব প্রশাসনে অচলাবস্থা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের চলমান কলম বিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজস্ব প্রশাসনের কার্যক্রম। গত তিন দিন ধরেই জরুরি সেবা ছাড়া নিয়মিত কোনও কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। এতে রাজস্ব আদায় এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।
আজ রোববারও সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টার কলম বিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তারা এই আন্দোলন করছেন। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চলমান অচলাবস্থা সমাধানে তাদের আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানান এনবিআর কর্মকর্তা। একই ব্যানারে তারা আন্দোলন করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার নিপুণ চাকমা বলেন, সংলাপের দরজা সব সময় খোলা ছিল এবং তা খোলা থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
এনবিআর কর্মকর্তারা অভিযোগ করে আসছেন, এনবিআর সংস্কার কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করেই এনবিআর পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সরকার এনবিআরকে দুটি আলাদা সত্তা, রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভাগ করে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এনবিআর সংস্কার কমিটির সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রস্তাবিত রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিল, এনবিআর সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ এবং এনবিআর কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সংগঠন, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজস্ব ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার।
কর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা বাস্তবভিত্তিক সংস্কারের পক্ষে। তবে তা যেন অংশীজনদের মতামত নিয়ে হয় এবং এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিনুল হক শাহিন ও হাসনাত ইমাম সরকারও বক্তব্য দেন।
বুধ ও বৃহস্পতিবারের মতো শনিবারও সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ব-স্ব কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও কোনও দাপ্তরিক কার্যক্রম করেননি। এজন্য আন্দোলনকারীরা করদাতা ও সেবাপ্রার্থীদের সাময়িক ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
পাশাপাশি তারা জানিয়েছেন, যৌক্তিক দাবি পূরণ হলে অতিরিক্ত সময় দিয়ে পেছানো কাজ দ্রুত সম্পন্ন করবেন। ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে বহিরাগতদের জড়ানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। তারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ সময় তারা বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের অনির্বাচিত ও কার্যকরিহীন কমিটিকে ‘প্রতিনিধিত্বহীন’ বলে অভিহিত করেন।
তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই কমিটিগুলোর নামে কোনও বক্তব্য বা কার্যক্রম শুধু ব্যক্তিগত বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্টরা দায় বহন করবেন।
এদিকে এনবিআর কর্মকর্তাদের চলমান কলম-বিরতি কর্মসূচি ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান।
গত ১৫ মে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিকে, আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে গত তিন দিন ধরে স্থবির হয়ে পড়েছে আমদানি-রপ্তানিসহ সব ধরণের কাস্টমস কার্যক্রম। দেশের বৃহত্তম এই কাস্টমস স্টেশনে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক নির্ধারণসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ হাজার বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হয়। এর মধ্যে আমদানির প্রায় ২ হাজার ও রপ্তানির প্রায় ৫ হাজার। তবে কর্মবিরতির কারণে কোনো কার্যক্রমই চলছে না।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে রাতে সরকার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করে, যার ফলে প্রায় পাঁচ দশকের পুরনো এনবিআর বিলুপ্ত হয়। এরপর থেকেই রাজস্ব প্রশাসনের তিন শাখার কর্মকর্তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ