তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫ ১০:৪৯ পিএম
সংযত বাজেটে বড় আশা
জুলাই বিপ্লবে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সংস্কারের দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্র্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিদেশি ঋণের কঠোর শর্ত আর রাজস্ব ঘাটতির বাস্তবতায় দাঁড়িয়েই মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়ে কিছুটা কিছুটা বেশি হলেও এটি বিগত বহু বছরের মধ্যে কম।
অর্থ উপদেষ্টার মতে, এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে জোর দেওয়া হয়েছে সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায়।
সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার বিকালে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সংসদ না থাকায় জাতীয় সাম্প্রচার মাধ্যমে তার বাজেট বক্তৃতা প্রচার করা হয়। তার আগে উপদেষ্টা পরিষদ ওই প্রস্তাব অনুমোদন করে। সর্বশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সালেহউদ্দিন আহমেদ তখন ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
এবার তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্র্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে নিজের প্রথম বাজেট দিলেন। ইউনূস সরকার রাষ্ট্র সংস্কার আর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেও তার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন বাজেট কাঠামোতে কোনো সংস্কারের চেষ্টায় যাননি। তার বাজেট বক্তৃতার আকার আগের চেয়ে ছোট হয়েছে, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত ব্যয়ের অঙ্ক আগের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে সামন্য কমেছে; তবে অর্থনীতির উদ্বেগ জাগানো সূচকগুলো মাথায় রেখে সালেহউদ্দিন অঙ্ক মেলাতে চেয়েছেন পুরোনো ছকেই।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থ উপদেষ্টা যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৩.৬ শতাংশের সমান। ঘাটতির এই অনুপাত গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
চলতি অর্থবছরের বাজেট কার্যকরের এক মাসের মাথায় ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। সরকার পতনের সেই আন্দোলনে সহিংসতা, কারফিউ, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের মধ্যে পুলিশ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খায়। থমকে যায় ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা। দায়িত্ব নেওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্র্বর্তী সরকারকে এক দিকে দুই অঙ্কের ঘরে থাকা মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হয়েছে, অন্যদিকে অর্থনীতির ক্ষত সারাতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে, যদিও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরানো যায়নি।
গত ৯ মাসে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো পক্ষ দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে, সেসবের সুরাহা করতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে সরকারকে। এর মধ্যে আইএমএফ এর ঋণের কিস্তির জন্য কঠিন শর্ত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুরু থেকেই ব্যয় কমানোর পথে হাঁটতে শুরু করেছিল ইউনূস সরকার। সেই অবস্থান বদলে সাহসী হওয়ার সুযোগ বা প্রয়োজন কোনোটাই ঘটেনি সালেহউদ্দিনের জন্য, কারণ নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর চাপ তার মাথার ওপর নেই।
সালেহউদ্দিন আহমেদ সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো, রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে জোর দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বিদেশি ঋণ পরিশোধের কথাও তাকে মাথায় রাখতে হয়েছে। নড়বড়ে অর্থনীতির গাড়ি নিয়ে তুমুল গতি তোলার চেষ্টা না করে চাকা যেন লাইনচ্যুত না হয়, সেই চেষ্টাই করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। তার পুরনো সমীকরণের বাজেটের শিরোনাম ঠিক করেছেন- ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’।
অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ হয়েছে, যা চূড়ান্ত হিসাবে কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি বৃদ্ধি পাবে এবং মধ্যমেয়াদে সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করছি। তার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বাজেটের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে।
সেখানে বলা হয়েছে, দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ স্বল্পমেয়াদে মাঝারি মানের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি মধ্যমেয়াদে একটি টেকসই ও সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকার আশা করছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত (সংশোধিত) প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা ৬ শতাংশ এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।
গত বছর বাজেটের সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দুই মাস ধরে চলা সেই আন্দোলন আর সহিংসতায় দেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খায়। মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ডিসেম্বরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্যেও পৌঁছানো যায়নি। সংশোধনে তা ৫ শতাংশ হবে বলে ধরা হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ধরা হতো। তবে অনেক অর্থনীতিবিদের মত বর্তমান সরকারেরও অভিযোগ, সে সময় তথ্য-উপাত্ত-পরিসংখ্যান নিয়ে কারসাজি হত। জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য দেখানো হত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে। তবে ২০০৫-২০০৯ সময়ে বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করা সালেহউদ্দিন আহমেদ সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছেন।
অর্থনীতিবিদদের অনেকে প্রবৃদ্ধির হারকে অর্থনীতির গতিশীলতা হিসেবে মানলেও টেকসই উন্নয়নের সূচক হিসেবে মানতে নারাজ। তারপরও অর্থনীতির এই প্রপঞ্চটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবার আলোচনায় এসেছে। অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, আমাদের এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে আমরা চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর আসে মহামারী। তার মধ্যেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য যখন ধরেছিল তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু অর্জিত হয় ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ ইকোনোমিক রিভিউয়ের তথ্য অনুসারে, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল এর চেয়ে কম, তিন দশমিক ২৪ শতাংশ। মহামারীর ধাক্কা সামলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে। দুঃসময় কাটিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। এরপর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অর্থনীতির আকার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য ধরেছিলেন তখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। পরে তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হলেও তা অর্জন হয়নি। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, ওই অর্থবছর শেষে স্থির মূল্যে জিডিপি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল, সেটা যখন ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করল তখনই শুরু হল ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে ফের টালমাটাল করে দেয়, আবার অনিশ্চয়তার কবলে পড়ে অর্থনীতি। বিশ্বের সব দেশকেই কমবেশি এর জের টানতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যায়, চড়ে যায় ডলারের বিনিময় হার। তাতে পণ্যের উৎপাদন খরচও বাড়ে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয় ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। তারপরও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু অর্জনের খাতায় যোগ হয়েছে ৫ শতাংশ। এবার প্রবৃদ্ধি কমবে, এমন পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আগেই দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছিল, এ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৩ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
বাজেটে আয়-ব্যয়ের হিসাব : ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা ইতোমধ্যে অনুমোদন করা হয়েছে। এবার পরিচালন ব্যয় (খাদ্য হিসাব, ঋণ ও অগ্রিম, অভ্যান্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ৫.৭৯ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা যাবে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ২২.৭৯ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়ে, যার পরিমাণ অন্তত ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা।
রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও অর্থ উপদেষ্টা আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৭২ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। নতুন অর্থবছরে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরার পরামর্শ দিয়েছিল আইএমএফ। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ৮.৯ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন সালেহউদ্দিন। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৭.৬৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অংক মোট বাজেটের ৬৩ শতাংশের বেশি।
গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫.৫৬ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা করা হয়। আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ১ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে।
বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৫১ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬৮ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৭৮ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
এছাড়া বিদেশি অনুদান থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা, এ সরকারের আমলে সংশোধনে তা কমিয়ে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়, যদিও এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণসহ মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে জনবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কর অব্যাহতি সুবিধা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা, কর জাল সম্প্রসারণ, বিভিন্ন পণ্য ও পরিসেবায় যথাসম্ভব একই হারে ভ্যাট নির্ধারণ করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
ঘাটতি মেটাতে বিদেশি উৎসে জোর : বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থ উপদেষ্টাকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি ঋণের ওপর। তবে চড়া সুদে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ কমাতে সালেহউদ্দিন দোর দিয়েছেন বিদেশি উৎসের ওপর।
তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।
২০২৪ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ মাস মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কৌশলে মে মাসে তা ৯ দশমিক ০৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থ উপদেষ্টা আশা করছেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৫.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ