অর্থনীতি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫ ০১:৪৪ এএম
খেলাপিতে ধুঁকছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সংকটে পুরো খাত
অনিয়ম, লুটপাট ও রাজনৈতিক প্রভাবের ছায়ায় ক্রমেই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকায়, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৫.৩১ শতাংশ।
২০২৫ সালের মার্চ শেষে এনবিএফআইগুলোর মোট ঋণ স্থিতি ছিল ৭৬ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। এক বছর আগের একই সময়ে (২০২৪ সালের মার্চ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নামে-বেনামে জামানত ছাড়াই বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে। অনেক গ্রাহকের আর কোনো খোঁজ নেই, ফলে ঋণ ফেরত না আসায় প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে।
এই খাতের বিপর্যয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা পিপলস লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এখন মারাত্মক খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বিআইএফসি ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের খেলাপির হার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়াও, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও আভিভা ফাইন্যান্সসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের খেলাপির হার ৮০-৯০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এতটাই নাজুক যে, অনেকেই কার্যত দেউলিয়া হওয়ার পথে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এনবিএফআই খাতের এই গভীর সংকট দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়বে, আর সাধারণ আমানতকারীরা হারাবেন তাদের সঞ্চিত অর্থ।
১৯৮১ সালে আইপিডিসির মাধ্যমে দেশে প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে দেশে ৩৫টি এনবিএফআই রয়েছে, যেগুলোর লাইসেন্স ও নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৪-এর আওতায় পরিচালিত হয়। তবে এত বিধিনিষেধের মধ্যেও মাত্র চার থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই ৫ শতাংশের নিচে খেলাপি ঋণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ভোরের আকাশ//হ.র