হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫ ০৫:৩৪ পিএম
দুইশত বছরের বাবুর হাট এখন জনবসতি
একটা সময় লোকমুখে সর্বাধিক জনপ্রিয় ধাঁধা ছিলো স্থানীয় মুরুব্বিরা নাতী-নাতনীদের সাথে গল্প করতেন ‘বাজার আছে ঘর নাই’ উত্তর ছিল বাবুর হাট। বাবুর হাট/বাজার হলো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীনতম হাট। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে হোসেনপুরের প্রথম জমজমাট বাজার বাবুরহাট প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই হাটে সূচনা লগ্ন থেকে কোন ঘর ছিলনা।
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের সূত্রমতে সরকারি তালিকায় ১৬টি বাজারের মধ্যে বাবুর বাজারের নাম থাকলেও বর্তমানে বাজারের নেই বাস্তবিক অস্তিত্ব।
জানা যায়, ১১ শতাংশ জায়গা নিয়ে বসতো এ হাট। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসতো এ হাটে, প্রয়োজনীয় সকল পন্য কেনাবেচা হতো। কিন্তু কালের আবর্তে বাবুর হাট এখন শুধুই স্মৃতি। হাটের যায়গায় এখন আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর শোভা পাচ্ছে। খেজমত নামের স্থানীয় এক মুরুব্বির মতানুসারে বাবুর হাটে কোনো ঘর না থাকলেও প্রায় ৪০ বছর আগে তার বাবা আব্দুল মজিদ অস্থায়ী ছোট একটা মুদি দোকান দিয়েছিল।
কথিত আছে, বাবুর হাটের নামকরণ হয় ইংরেজ আমলের নীলকর বাবুদের নামানুসারে মূলত নীলকরদের হাতেই শুরু হয়েছিল বাবুর হাট।
বাবুর হাটটি বিলুপ্তির পিছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ইংরেজ শাসকদের স্মৃতি কেউ ধরে রাখতে চায়না কারণ তৎকালীন ইংরেজ শাসকদের নিষ্ঠুরতম বর্বরোচিত করুণ আচরণ আজও কষ্ট দেয় মুসলিমদের এছাড়াও আশপাশে এখন পিতলগঞ্জ, পাগলা বাজার ও হারেঞ্জাসহ অসংখ্য হাট/বাজার গড়ে উঠেছে যেখানে সবরকম নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায়। প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার জমতো বাবুর হাট বর্তমানে একই দিনে জমে হাজীপুর বাজার।
হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার (সাহেবের গাঁও) এলাকায় নীলকরদের বাড়ি এবং চর পিতলগঞ্জ এলাকায় নীলকুঠির কার্যালয় ও পুরাতন পুকুরটি নীলকর সাহেবদের নানা স্মৃতি আজও বহন করে চলেছে। বাংলার তদানীন্তন সুলতান আলা উদ্দিন হোসেন শাহের নামানুসারে হোসেনপুর পরগনার ব্রহ্মপুত্র নদের পুর্ব তীরে গড়ে উঠেছিল নীলকুঠি। আনুমানিক ১৭৩০ থেকে ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নীলকুঠি প্রতিষ্ঠা করে নীলের আবাদ শুরু করে। এক সময় এখান থেকে ইংল্যান্ডে প্রচুর নীল রপ্তানি করা হতো। প্রথম দিকে ইংরেজরা নীলের ব্যবসায় লাভ করলেও পরে ব্যবসায় ধস নেমে আসে।
নীলকর ওয়াইজস্টিফেন্স ছিলেন এর মালিক ও ব্যবসায়ী। তখনকার সময়ে এ অঞ্চলে বাধ্যতামূলকভাবে চাষিদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হতো নীল চাষ। জানা যায়, ইংরেজ আমলে ফ্রান্সের অধিবাসী মাইকেল প্যাটেল হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার (সাহেবের গাঁও) এলাকায় কারুকার্যময় একটি বাড়ি তৈরি এবং এলেনবেথ হেনসন জমিদার আমলে এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রন করতেন।
চর পিতলগঞ্জ বাবুর বাজার এলাকায় নীলকর কার্যালয়ের ধংসাবশেষ ও কার্যালয়ের পূর্ব দিকে সে আমলের একটি পুকুর রয়েছে। তাদের সুবিধার্থে তৎকালে কাছেই একটি বাজার জমানোর উদ্যোগ নেন পরবর্তীতে এটি বাবুর হাট/বাজার নামেই পরিচিতি লাভ করে। এলাকাটি আজও নীলের কুঠি হিসেবে পরিচিত। সিদলা, পিতলগঞ্জ, হারেঞ্জা, চৌদার, রানী খামার, সাহেবেরচর এলাকায় আজও ইংরেজ পাদ্রী,পিতল সহ অন্যান্য খ্রিষ্টান নীলকরদের কিংবদন্তি কাহিনী এ অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
হয়ত এখনকার প্রজন্ম এ ইতিহাস কমই জানে একটা সময় আর পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবেনা বাবুর বাজারের গল্প।
ভোরের আকাশ/এসআই