কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫ ০৫:৫১ পিএম
সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ
কিশোরগঞ্জের ১৩ টি উপজেলার চিকিৎসা সেবার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এটি ২০১১ সালে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট রোগীর সেবার লক্ষ্যে স্থাপিত হয়। চিকিৎসা সেবা শুরু করা হয় ২০১৮ সাল থেকে, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অদ্যাবধি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন।
(১৫ জানুয়ারি) বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ভুল ইনজেকশন পুশ করায় দুজন রোগী মারা যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, যে ইনজেকশনটি পুশ করা হয়েছিল সেটি ছিল এনাসথিয়া অজ্ঞান করার ইনজেকশন, যা থাকার কথা ছিল ওটিতে কিন্তু ঐ ইনজেকশন ওয়ার্ডে থাকায় দুই হানিয়া অপারেশনের রোগীকে সিনিয়র নার্স নাদিরা বেগমের ভুল করে পুশ করায়, তিন মিনিটের মধ্যেই দুজন রোগীই মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ে।
এ ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী নার্স নাদিরাসহ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকার ভুল ইনজেকশন পুশ করার কথা স্বীকার করেন। পরে তদন্ত সাপেক্ষে সিনিয়র নার্স নাদিরাকে চাকরি হতে প্রত্যাহার করা হয়।
২৬ দিনের মাথায় আবারও (১০ ফেরুয়ারি) তারিখে বিনয় সেন (৬৫) কিশোরগঞ্জ শহরের সতাল এলাকার মৃত নয়ন সেনের ছেলের মৃত্যুর অভিযোগ উঠে, ঘটনার সততা যাচাই না করেই রোগীর আত্মীয়স্বজন ও বিক্ষিপ্ত জনতা হাসপাতাল ভাংচুর শুরু করে, বিষয়টি জানাজানির পর, পুলিশ, সেনাবাহিনী, হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকার রোগী মৃত্যুর ভুল ইনজেকশন পুশ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিনয় সেন মৃত্যুটি স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকমিটির রিপোর্টে ভুল চিকিৎসার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
লক্ষ্য করা গেছে প্রতিনিয়তই দূর দুরন্ত থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শত শত রোগী শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন এবং সিংহভাগ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গণমাধ্যম কর্মীদেরকে জানান ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট রোগীর চিকিৎসার জন্য ২০০ ডাক্তার এর প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের আছে মাত্র ৮৫ জন ডাক্তার।
তিনি আরও জানান, জনবল কাঠামোর সংকটের ঘাটতি পূরণ হলে আমরা আরো ভালো মানের চিকিৎসা সেবা দিতে পারতাম।
গোপন সূত্রে জানা যায়, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ হাসপাতালের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পথে একটি চক্র নিজেদের স্বার্থ হাছিলের জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন এমনকি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ এনে গুজব ছড়িয়ে হাসপাতালের চিকিৎসার মান ক্ষুন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ষড়যন্ত্রমূলক একটি অভিযোগ উঠেছে রাজিব চন্দ্র সূত্রধর নামের ওই সিনিয়র স্টাফ নার্স দীর্ঘদিন হাসপাতালের ডিউটিতে অনুপস্থিত থাকলেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকারের (দোলা ভাইয়ের) দাপটে নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ গণমাধ্যম কর্মী বৃন্দ অনুসন্ধান চালিয়ে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেন, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকারের প্রকৃতগত কোন শ্যালকেই নেই, এটি একটি কাল্পনিক, চক্রান্তমূলক সাজানো অভিযোগ বলে দাবি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সিনিয়র স্টাফ নার্স রাজিব চন্দ্র সূত্রধর এর অনুপস্থিত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানায়, রাজিব চন্দ্র সূত্রধর নিয়মিত অফিস করেন কিন্তু ভুলবশত কারণে মাঝে মাঝে বায়োমেট্রিক হাজিরায় কিংবা খাতায় হাজিরায় সাইন করেন না, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
জানা যায়, গত বুধবার (১৪ মে) সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে বিভিন্ন অভিযোগের উপর ভিত্তি করে মোঃ মোজাম্মেল হোসেন যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহবায়ক স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ঢাকা, ডাক্তার মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ সহযোগী অধ্যাপক এনাথসি লজি বিভাগ ময়মনসিংহ, মোসাম্মাৎ জরিনা খাতুন অর্থ বাজেট ও সদস্য নাসি ও মিডওয়াইফাটি মহাখালী ঢাকা, আহমেদ হোসাইন সহকারি পরিচালক (শৃঙ্খলা) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী ঢাকা , খন্দকার রবিউল ইসলাম সিনিয়র সহকারি সচিব প্রশাসন (চার শাখা) ও সদস্য সচিব ঢাকা।
এই পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট স্বাস্থ্য সেবা ঢাকা থেকে তদন্ত কমিটি কিশোরগঞ্জ সরকারি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যবেক্ষণ করতে আসেন। উল্লেখ্য কিছুদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করার হবে বলে জানা গেছে।
ভোরের আকাশ/এসআই