কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ০৬:২৮ পিএম
শিশু শিক্ষার্থীকে বস্তায় ভরে নির্যাতন: সেই শিক্ষক কারাগারে
গাজীপুরের কালীগঞ্জে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ৮ বছর বয়সী এক ছাত্রকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মো. জাকারিয়া শেখকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার (২৯ জুন) দুপুরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে গাজীপুর আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন।
শনিবার (২৮ জুন) রাতে নির্যাতিত ছাত্রের বাবা মো. মোশারফ শেখ বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় শিশু আইন ২০১৩-এর ৭০ ধারায় মামলা (নং: ১৭(০৬)২৫) দায়ের করেন। মামলার একমাত্র অভিযুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক জাকারিয়া শেখ (২৯) কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের ফুলদী গ্রামে অবস্থিত ‘নূরে মদিনা হাফেজিয়া মাদ্রাসা’র নূরানী বিভাগে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক (৮) ওই মাদ্রাসার একমাত্র শিক্ষক জাকারিয়া শেখের অধীনে পড়াশোনা করতেন।
গত শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ছুটি চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষক জাকারিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে শিশু আবু বক্করকে বেধড়ক মারধর করেন। এরপর রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাকে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকিয়ে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রাতেই প্রায় ১৫০-২০০ জন স্থানীয় লোকজন মাদ্রাসা ঘেরাও করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরদিন শনিবার (২৮ জুন) তিনজন মাদ্রাসা ছাত্র নির্যাতিত শিশুকে ফেরত নিতে তার বাড়িতে গেলে, তার মা ফরিদা বেগম ছেলেকে বুঝিয়ে দিয়ে শিক্ষকের কাছে অনুরোধ করেন যেন আর নির্যাতন না করা হয়। কিন্তু শিক্ষক সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে শিশুটিকে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আটকে রাখেন।
এ ঘটনায় ছাত্রের পরিবার পুনরায় থানায় অভিযোগ জানায়। এছাড়া, মাদ্রাসার দুই ছাত্র হৃদয় (১৮) ও সাহাদ সাদ (১৭) ওই কক্ষে গিয়ে আবু বক্করকে দেখতে চাইলে শিক্ষক তাদেরও বাধা দেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন বলেন, "ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষক জাকারিয়া শেখকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। শিশুটির নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।"
ভোরের আকাশ/আজাসা