পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ০১:১৩ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় লেয়ার মুরগির খামার একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে উঠলেও, সাম্প্রতিক সময়ে ডিমের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ও মুরগির খাদ্যের লাগামহীন দামে অনেক খামারি এখন লোকসানের মুখে। ফলে এলাকার অনেক ছোট ও মাঝারি খামারিকে পড়তে হচ্ছে আর্থিক সংকটে। কেউ কেউ খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেলার নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন বিশেষ করে মালিখালী, দেউলবাড়ী ও কলারদোয়ানিয়া এলাকায় অসংখ্য ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে লেয়ার মুরগির খামার গড়ে তুলেছিলেন। শুরুর দিকে খরচ কম ও ডিমের ভালো দাম থাকায় অনেকে স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বনির্ভরতার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ডিমের দাম অস্থির হলেও খামারিদের প্রাপ্ত দাম ন্যূনতম পর্যায়েই রয়ে গেছে। বিপরীতে, প্রায়ই বাড়ছে মুরগির খাদ্যের দাম, যার ফলে খরচ বেড়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি।
মিজানুর রহমান নামে এক খামারি জানান,একটা মুরগি দিনে একটা করে ডিম দেয়। এখন প্রতি পিস ডিম পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯.৩০ থেকে ৯.৫০ টাকায়। অথচ শুধু খাবার খরচই উঠে যায় ১০ টাকা বা তার বেশি। ওষুধ, বিদ্যুৎ, শ্রমিকের মজুরি তো আলাদা।
অন্য একজন খামারি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমরা তো শুধু ডিম বেচি না, নিজেদের ঘাম বেচি। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, মূলধনই উঠছে না।
খামারিরা অভিযোগ করেন, খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করে পাইকাররা অল্প দামে নিয়ে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে মূল উৎপাদকরা থেকে যাচ্ছেন বঞ্চিত।
নাজিরপুর সদর এলাকার এক খামারি বলেন, ডিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১-১২ টাকা, অথচ আমাদের কাছ থেকে ৯. ৩০/৯. ৫০টাকায় নেয়। এত ব্যবধান কীভাবে হয়?
বেশিরভাগ খামারি জানান, সরকারি সহায়তা বা ভর্তুকি পেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। বিশেষ করে খাদ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে এই খাতটি আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোঃ আল মুক্তাদির রাব্বি বলেন:মুরগির খাদ্যের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে ভুট্টা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভুট্টার চাষ না হওয়ায় এটি আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। শুধু ভুট্টা নয়, ফিড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সয়াবিন মিল, ভিটামিনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও আমদানিনির্ভর, যা ফিড উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে তোলে। ফলে মুরগির খাদ্যের দাম সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।
এছাড়া কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানির উপর নির্ভরশীলতা এবং পরিবহন ব্যয়ের কারণে ফিডের দাম আরও বাড়ছে। তবে ফিডের দাম নির্ধারণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই। এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।
ভোরের আকাশ/তা.কা