ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:২৮ পিএম
ফাইল ছবি
দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে সিলেট ও রংপুর বিভাগের মোট সাতটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলাগুলো হলো- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ও রংপুর। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ায় সিলেট বিভাগের ৩ জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক সতর্কবাতায় এ তথ্য জানানো হয়।
সতর্কবাতায় বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়েছে। এ দুই নদীর পানি আগামী ৩ দিন বাড়তে পারে। এতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। এরইমধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে ওই সতর্কবার্তায়।
সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু স্থানে এবং উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও মিজোরাম প্রদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এবং উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহার ও ত্রিপুরায় বিচ্ছিন্নভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে দেশের কয়েকটি এলাকায় আগামী তিন দিন নদ নদীর পানি বাড়তে পারে।
এদিকে, খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জলকপাট। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে আবারও তিস্তার পানি বেড়ে গেছে। সোমবার সকাল ৬টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির স্তর রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা পাড়ের নীলফামারীর ডিমলা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কিছু জায়গায় ইতোমধ্যেই পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পানির স্তর বাড়তে থাকলে চরাঞ্চল ও নিম্নভূমি প্লাবিত হতে পারে। এতে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় রাখার চেষ্টা করছেন।
ডিমলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তায় পানি বেড়েই চলেছে। এখনো ঘরবাড়ি ডুবেনি, কিন্তু মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, উজানে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল ৬টা থেকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
রংপুর বিভাগের চার জেলায় বন্যা শঙ্কা
দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কুড়িগ্রামসহ রংপুর বিভাগের চার জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পাউবো কুড়িগ্রাম বলছে, তিস্তা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস থাকলেও কুড়িগ্রামে তিস্তার নিম্নাঞ্চলে তেমন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে দুধকুমারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময়ে তিস্তা ও দুধকুমার নদীসমূহ বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ও রংপুর জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে পাউবো কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রতিটি গেজ স্টেশনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস রয়েছে। কুড়িগ্রামে দুধকুমারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম। দুই-তিন দিন পর পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ