কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৬:৩৯ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা দেবনাথ। তিনি ১৩০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ১২৬৪ নম্বর।
অনামিকা কুমিল্লা নগরীর দিগম্বরীতলা এলাকায় থাকেন। তার বাবা দিলীপ কুমার দেবনাথ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার এবং মা বিনা রাণী দেবনাথ কুমিল্লার ঝাঁকুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন।
কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসিতে সেরা সাফল্য অর্জন করা অনামিকা দেবনাথ বলেন ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাইড বই নিয়ে বসে থেকে পরীক্ষার হলে লিখে আসলেই ভালো ফলাফল আশা করা যায় না। কারণ ভালো ফলাফলের জন্য একটু ব্যতিক্রম লেখা চাই, তাই ভালো নম্বর পেতে হলে শিক্ষকদের সহায়তায় ও নিজের চেষ্টায় হ্যান্ড নোট করে গাইড বই নির্ভরতা কমাতে হবে।’
বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জুলাই চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাশের হার ছিল ৬৩.৬০ শতাংশ। অনামিকা দেবনাথ কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৬৪ নম্বর পেয়েছেন।
যদিও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, বোর্ড থেকে প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্থান নির্ধারণ করা হয় না, শিক্ষার্থীরাই নিজেদের মতো করে নম্বর বের করে নেয়।
গত ১০ জুলাই চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ৬টি জেলার সমম্বয়ে গঠিত কুমিল্লা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৬৩ দশমিক ৬০ ভাগ। অনামিকা দেবনাথ কুমিল্লা বোর্ডের অধীন ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষায় তিনি বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলিয়ে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৯২, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলিয়ে ২০০ নম্বরের ১৮৯, গণিতে ১০০ নম্বরের মধ্যে ১০০, বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজে ৯৪, হিন্দু ধর্মীয় বিষয়ে ৯৭, পদার্থ বিদ্যালয় ৯৮, রসায়নে ৯৭, উচ্চতর গণিতে ৯৯, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ৫০ এর মধ্যে ৪৮, জীব বিজ্ঞানে ১০০, শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা ১০০ এবং ক্যারিয়ার এডুকেশন ৫০ এর মধ্যে ৫০ পেয়েছে। সব মিলিয়ে সে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ১২৬৪ নম্বর।
অনামিকা বলেন, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজে আমি আবাসিকে থেকে লেখা পড়া করেছি। শিক্ষকরা আমাকে কখনোই মা-বাবার শূন্যতা বুঝতে দেননি। আমি প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনই শেষ করতাম, এর জন্য ‘স্পেশাল শিডিউল’ করেছি। বিশেষ করে পরীক্ষা শুরুর আগের তিন মাস আমি ক্লাসের পরেও প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা পড়াশুনা করেছি। মোবাইল ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। তাই সপ্তাহে দুই তিনদিন শিক্ষকদের বাটন মোবাইল দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হতো। নিয়মিত ক্লাস ও মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করলে সব শিক্ষার্থীই ভালো ফলাফল করতে পারবে। তবে গাইড বইয়ের উপর নির্ভরতা থাকলে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, সবাই তো চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী হতে চায়, আমার ইচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে লেখা পড়া করা। আমি এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিবো ইনশাল্লাহ।
অনামিকার মা স্কুল শিক্ষক বিনা রাণী দেবনাথ বলেন, ও ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী। সে নবাব ফয়জুন্নেছায় সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। এরপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তার স্কুলের শিক্ষকরা তার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমি অধ্যক্ষসহ সব শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
অপরদিকে, ১২৬১ নম্বর পাওয়া তাসনুভা ইসলাম তোহা কুমিল্লা নগরীর নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের চুলাশ গ্রামের শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়ে। তোহা বুয়েটে পড়ে প্রকৌশলী হতে ইচ্ছুক।
ভোরের আকাশ/জাআ