× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বরগুনায় দাদনের ফাঁদে জেলেদের জীবন

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:১৭ এএম

বরগুনায় দাদনের ফাঁদে জেলেদের জীবন

বরগুনায় দাদনের ফাঁদে জেলেদের জীবন

বরগুনার উপকূলীয় অঞ্চলে জেলেদের জীবন দাদন প্রথার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। শত শত বছর ধরে চলে আসা এই অগ্রিম অর্থ প্রদানের প্রথা আজ আধুনিক বরগুনার মৎস্যজীবীদের জীবনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যারা সাগরে জীবন বাজি রেখে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তারা আজও অর্থনৈতিক মুক্তি পাননি। বছর শেষে কোটি টাকার মাছ শিকার করলেও পরিবর্তন আসেনি তাদের ভাগ্যে। তাদের এই বঞ্চনার অন্যতম প্রধান কারণ দাদন প্রথা।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরগুনার প্রতি ১০০ জন জেলের মধ্যে ৯৫ জনই দাদনের ফাঁদে আটকে রয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জন জেলে শ্রমের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন, আবার অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশায় জীবনযাপন করার।

উপকূলীয় অঞ্চলের হাজারো জেলের জীবনে টিকে থাকা এখনই বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে মহাজনের চক্র-এই দুইয়ের চাপে তারা দিশেহারা। টেকসই ও ন্যায়সংগত মৎস্যনীতি বাস্তবায়নই পারে এই সম্ভাবনাময় খাতকে রক্ষা করতে। এখন প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের একসঙ্গে কাজ করা। না হলে, দাদনের এই শেকলেই হারিয়ে যাবে বরগুনার জেলেদের জীবন ও স্বপ্ন।

দাদনের এই ফাঁদ শুধু সাগরের জেলেদের নয়, নদ-নদীর জেলেদের জীবনেও ছায়া ফেলেছে। তারা ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাদন নিয়ে মাছ ধরেন এবং বাধ্য হয়ে নির্দিষ্ট আড়তের কাছেই মাছ বিক্রি করেন। হাক-ডাকে তারা এই মাছ বিক্রি করতে পারেন না। কম টাকায় কিনে রাখেন দাদনের টাকা দেওয়া ওই আড়তের মালিকেরা।

৭২ বছরের জেলে মো. আলম ফিটার বলেন, মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবা আজম আলীর সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাই। তখন শক্তি ছিল না জাল টানার, তাই মাছ ছুটিয়ে বরফ দেওয়ার কাজ করতাম। এত বছরেও কিছুই পাল্টায়নি জীবনে। প্রতিবছরই ঝড়ের কবলে পড়তে হয়, গভীর বঙ্গোপসাগরে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে জীবিকারের তাগিদে যেতে হয় মাছ ধরতে। ট্রলার মালিক এবং আড়তদারের ভাগ্য পরিবর্তন হলেও আমাদের মতো জেলে কিংবা মাঝির ঘাড়ে রয়ে গেছে দাদনের বোঝা।

ট্রলারের মাঝি সোহায়েল হোসেন বলেন, দাদন নিয়ে মাছ শিকার করতে হয়, আর চুক্তি অনুযায়ী যা মাছ ধরি, সব দিতে হয় আড়তদারকে। দাম নির্ধারণ করেন তিনিই, আমাদের কোনো কথাই চলে না।

ট্রলার মালিক রাশেদুজ্জামান রাসেল বলেন, আমরাই তো তাদের পেছনে বিনিয়োগ করি। এর মধ্যে ঝুঁকিও থাকে অনেক বেশি। দুই লাখ টাকা খরচ করে নৌকা পাঠানোর পর অনেক সময় দেখা যায়, তারা পঞ্চাশ হাজার টাকার মাছও আনতে পারেনি। ফলে এই ক্ষতিটা আমাদেরই নিতে হয়। সাগরে যাওয়ার আগে জেলেদের যে টাকা আমরা দেই, সেই টাকা তারা কখনো শোধ করতে পারে না। এতে আমাদের অনেক ক্ষতিও হয়। তারপরও আমরা জেলেদের কাছে টাকা শোধ করার জন্য কোনো চাপ দেই না। জেলেদের দস্যুরা অপহরণ করলে আমরাই চাঁদা দিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনি। সেই টাকা জেলেদের পরিবারের কেউ কখনো শোধ করে না। কেউ বলতে পারবে না টাকার জন্য আমরা জেলেদের দস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত করে আনি না। জেলেদের সুখে-দুঃখে আমরা মালিকপক্ষ সব সময় তাদের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

ট্রলার মালিক সেলিম খান বলেন, ২০১৬ সালে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করেন ট্রলার এফবি বাপ্পি। লাভের আশায় সাগরে গেলেও বারবার ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। বাধ্য হয়ে তিনি দাদনের পথে হাঁটেন।

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সাগরে মাছ কমে যাওয়ায় জেলে ও ট্রলার মালিকরা লোকসানে পড়ছেন। কোনো ব্যাংক বা এনজিও ঋণ না দেওয়ায় দাদনই একমাত্র ভরসা।

অর্থনীতিবিদ ড. শহিদুল জাহিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে রিফাইন্যান্স ফান্ড গঠন করে উপকূলীয় জেলেদের স্বল্পসুদে ঋণ দিতে পারে। এতে করে তারা মহাজনের দাদনের ওপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে মাছ শিকার করতে পারবে। জেলেদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ-এদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের জেলেদের পাশে এগিয়ে আসা উচিত।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, জেলেদের স্বাবলম্বী করতে বিনামূল্যে বকনা বাছুর, ছাগল ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে নগদ অর্থ সহায়তার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা এই বিষয়গুলো তুলে ধরব এবং জেলেদের মাথার উপর যে দাদনের বোঝা চেপে আছে সেটা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করব। আমরা সব সময়ই জেলেদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে দাদন প্রথা বন্ধে কার্যকরী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, যাতে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা পান।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 দেশ গড়তে আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

দেশ গড়তে আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

 যেসব জেলায় টানা ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস

যেসব জেলায় টানা ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস

 সুনামগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে গ্রাফিতি প্রদর্শনী

সুনামগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে গ্রাফিতি প্রদর্শনী

 কলকাতায় বাংলাদেশি মডেল গ্রেপ্তার

কলকাতায় বাংলাদেশি মডেল গ্রেপ্তার

 শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৯৭তম সভা অনুষ্ঠিত

শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৯৭তম সভা অনুষ্ঠিত

 পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা বাড়াল সরকার

পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা বাড়াল সরকার

 সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে পর্তুগাল: রিপোর্ট

সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে পর্তুগাল: রিপোর্ট

 পাথরঘাটায় ৩৬ মেধাবী শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দিলো শিক্ষা অধিদপ্তর

পাথরঘাটায় ৩৬ মেধাবী শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দিলো শিক্ষা অধিদপ্তর

 সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

 নওগাঁ সীমান্তে ১০ জনকে পুশইন করল বিএসএফ

নওগাঁ সীমান্তে ১০ জনকে পুশইন করল বিএসএফ

 প্রিয় শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বিদায়, সহকর্মীদের চোখে জল

প্রিয় শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বিদায়, সহকর্মীদের চোখে জল

 থানায় এসে কেউ যেন অপমানিত না হয়: আইজিপি

থানায় এসে কেউ যেন অপমানিত না হয়: আইজিপি

 ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন:  রাহুল

ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল

 পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত কমিশনের

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত কমিশনের

 কোনো বিশেষ দলের প্রতি আমাদের আলাদা নজর নেই: সেনাবাহিনী

কোনো বিশেষ দলের প্রতি আমাদের আলাদা নজর নেই: সেনাবাহিনী

 গাইবান্ধায় ভোক্তা অধিকারের অভিযানে ৩ হোটেলকে জরিমানা

গাইবান্ধায় ভোক্তা অধিকারের অভিযানে ৩ হোটেলকে জরিমানা

 কুড়িগ্রামে চিকিৎসকের অবহেলায় আবারও রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

কুড়িগ্রামে চিকিৎসকের অবহেলায় আবারও রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

 গাজীপুর-৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেন বিএনপি’র প্রভাষক বশির উদ্দিন

গাজীপুর-৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেন বিএনপি’র প্রভাষক বশির উদ্দিন

 সারাদেশে নৌ পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ২৩২

সারাদেশে নৌ পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ২৩২

সংশ্লিষ্ট

সুনামগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে গ্রাফিতি প্রদর্শনী

সুনামগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে গ্রাফিতি প্রদর্শনী

পাথরঘাটায় ৩৬ মেধাবী শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দিলো শিক্ষা অধিদপ্তর

পাথরঘাটায় ৩৬ মেধাবী শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দিলো শিক্ষা অধিদপ্তর

সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

নওগাঁ সীমান্তে ১০ জনকে পুশইন করল বিএসএফ

নওগাঁ সীমান্তে ১০ জনকে পুশইন করল বিএসএফ