পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ইসা হাসান, পাথরঘাটা (বরগুনা)
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ০১:৫৮ পিএম
জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত
বরগুনার পাথরঘাটা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগী সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার পাথরঘাটায় ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’। ২০০৫ সালে বরগুনা-২ আসনের সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম মনির প্রচেষ্টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে শয্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে রয়েছে চিকিৎসক ও নার্সসহ সহায়ক লোকবল সংকট।
প্রতিদিন পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় একশো থেকে দেড়শো নতুন রোগী আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এছাড়া জরুরি বিভাগে অর্ধশত রোগী সেবা নেন। এর মধ্যে ২০-৩০ জন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন।
সরজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে এখানে ৩১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে ৬ জন চিকিৎসক কর্মরত দেখা গেলেও বাস্তবে এখানে নিয়মিত কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। এই ৩ জনের মধ্য থেকেও ১ জন চিকিৎসক সদ্য ট্রেনিংয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২ জন। যে ২ জন চিকিৎসক বর্তমানে কর্মরত আছেন তার মধ্য থেকে একজন হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুব হোসেন। তাকে উপজেলার তিন লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো পরিচালনা করতে হয়। তার পক্ষে আউটডোরে চিকিৎসাসেবা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব হয় না। আর বাকি যে একজন চিকিৎসক আছেন তিনি হলেন ডেন্টিস্ট সার্জন ডা. আল আমিন। তাকেও অন্যান্য চিকিৎসা সেবাও দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ট্রেনিংয়ে থাকায় ‘স্টাফ’ দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মূল ফটক থেকে ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় কয়েকজন রোগী জরুরি বিভাগের সামনের বেঞ্চে শুয়ে আছে। কথা বলে জানা যায়, এখানে মাত্র একজন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। একজন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দেয়ায় বাহিরের বেঞ্চে শুয়ে থাকা থাকা রোগীরা বেশ গুরুতর হলেও বাকি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে জোড়া তালি দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা গেলেও আউটডোরের চিকিৎসা সেবা প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে। আর এখানের ভর্তি ওয়ার্ডগুলোতে শুধু নার্স দিয়েই চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে।
এখানে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বেঞ্চে বসেছিলেন ছিলেন রেশমি আক্তার। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা নিতে এসে সকাল থেকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে আছি। এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই।’
হাসপাতালে ভর্তি ওয়ার্ড আছেন কুলসুম বেগম। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এখানে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা শুরু করে চিকিৎসা সেবা নেই। তারপরও বাধ্য হয়ে আছি। কেননা আমরা অত্যন্ত গরিব মানুষ। ভালো ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য নেই।
হাসপাতালে ভর্তি ওয়ার্ডে ভর্তিরোগীর এক স্বজন বলেন, ‘এত বড় একটি হাসপাতালে মাত্র দুজন চিকিৎসক। আমার ছেলেকে এখানে ভর্তি পড়ানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের তেমন একটা দেখা পাইনি।
আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আব্দুর রহিম বলেন, সেবা নিতে আসার পর এক্স-রে সহ আমাকে দুইটা টেস্ট দিয়ে বাহির থেকে কড়িয়ে আনতে বলেছে। আমি তাদের এখানে টেস্টগুলো হবে না এটা জিজ্ঞেস করায় তারা জানিয়েছেন এখানে এই টেস্টগুলোর মেশিন নষ্ট তাই বাড়ি থেকে করাতে হবে। কিন্তু আমি যে দিন আনি দিন খাই তাই আমার পক্ষে এই টেস্টগুলো করানো সম্ভব না। এজন্য আমাকে চিকিৎসা সেবা না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
পাথরঘাটা পৌর শহরের বাসিন্দা সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম কাজী রাকিব জানান, এই উপজেলার তিন লক্ষ মানুষের বিপরীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ বছর ধরেই চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্সসহ অন্যান্য জনবল সংকট চলে আসছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকট থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্যা নিরেশনে এ উপজেলার সাধারণ মানুষ মানববন্ধন থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আসলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মাহবুব হোসেন ‘ভোরের আকাশ’কে জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীরাই যে শুধু ভোগান্তিতে পড়ে এমনটি নয় বরং এখানে ৩১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে আমি সহ মাত্র ২ জন চিকিৎসক থাকায় সেবা প্রত্যাশীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে যে শুধুই চিকিৎসক সংকট এমনটি নয় বরং এখানে অন্যান্য নার্স ও স্টাফেরও সংকট রয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহখানেক আগে বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপসচিব এসেছিল আমরা তাকে এখানে চিকিৎসক সহ অন্যান্য যে সংকট বিষয়গুলো অবহিত করেছি। তিনি আমাদেরকে এখানের চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি অতি দ্রুত সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
ভোরের আকাশ/আজাসা