লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ১২:৩৪ পিএম
লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসাছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, শিক্ষক আটক
লক্ষ্মীপুরে আল-মুঈন ইসলামী একাডেমি থেকে হেফজ বিভাগের ছাত্র সানিম হোসাইনের (৭) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় মাদরাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরিবারের দাবি, শিক্ষক মাহমুদুর রহমানের মারধরে সে মারা গেছে। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে সানিম টয়লেটে ঢুকে আত্মহত্যা করেছে বলে শিক্ষকরা প্রচার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষক মাহমুদুর রহমানকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে মাদরাসা কক্ষের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গামছা নিয়ে সানিমকে টয়লেটে ঢুকতে দেখা গেলেও বাহির হওয়া কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। মাদরাসার অধ্যক্ষ বশির আহমেদ তা দেখাতে পারেননি। সানিমের মরদেহ তৃতীয় তলার টয়লেট থেকে শিক্ষকরা নিচতলায় নামিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে নামানোর ভিডিও দেখাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে সানিমের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার মা-বাবাসহ স্বজনরা। ছেলের শোকে মাদরাসার মেঝেতে বারাবার কান্নায় মূর্ছা যেতে দেখা যায় অসহায় মা-বাবাকে।
নিহত সানিমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। সানিমের রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোন্নাফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা মাদরাসার শিক্ষক ও নিহত সানিমের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
নিহত সানিম রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের কুচিয়ামারা গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী হুমায়ুন মাতব্বরের ছেলে। সানিমের শোকে প্রায় অচেতন হয়ে পড়া তার বাবা হুমায়ুন মাতাব্বর ও মা জহুরা বেগমের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
সানিমের ফুফাতো ভাই বকশি মোহাম্মদ শাহিদ হোসাইন বলেন, ‘সানিম ২০ পারা কোরআনে হাফেজ। ৩-৪ দিন আগে আমাদের কাছে খবর যায় তিনি নাকি হুজুরের কথা শোনেন না, এমনকি হুজুরের নামে বদনাম করে। এ নিয়ে হুজুর তার ওপর রেগে ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে খবর পাই সানিম নাকি টয়লেটে ঢুকে গলায় ফাঁস দিয়েছে। মাদরাসায় এসে সেই হুজুরে কথা জিজ্ঞেস করলে সবাই বলেছে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সানিমের মরদেহ আমরা টয়লেটে পাইনি। তার মরদেহ মাদরাসার নিচতলার একটি কক্ষে বিছানায় পেয়েছি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যার বিচার চাই।’
সানিমের কয়েকজন সহপাঠী জানায়, সকালে সানিমকে শিক্ষক মাহমুদুর রহমান মারধর করেছে। তবে তারা তার মৃত্যুর কারণ বলতে পারেনি। ঘটনার সময় কি হয়েছে তাও তারা জানে না।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বশির আহমেদ বলেন, ক্লাস শেষে সবাইকে নামাজ আর খাওয়ার বিরতি দেওয়া হয়। সবাই খেতে গেলেও সানিম যাইনি। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, সে গামছা নিয়ে টয়লেটের প্রবেশ করেন। সেখান থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক বলেন, মাদরাসাছাত্র আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমরা এসেছি। তার গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো দাগ রয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা