বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫ ০৮:৪৩ পিএম
বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব বেড়েছে ৩১৬ কোটি টাকা
২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোরের বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ৬,৭০৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭,০২১.৫১ কোটি টাকা। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৩১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪.৭২ শতাংশ বেশি।
কাস্টমস সূত্র জানায়, আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ৫,৯৪৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও আদায় হয়েছিল ৬,১৬৭.৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সে বছরও ২১৯ কোটি ৮ লাখ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছিল।
রাজস্ব বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, রাজস্ব বোর্ডের কলম বিরতি ও শাটডাউনের মধ্যেও বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা দফতরে উপস্থিত থেকে রাজস্ব আদায়ের তদারকি চালিয়ে গেছেন। তবে ব্যবসায়ীদের আরেকটি পক্ষ বলছে আরো বেশি রাজস্ব আহরনের কথা থাকলেও শুল্কফাঁকি দিয়ে আমদানি যোগ্যপণ্য পাচার বাড়ায় তা সম্ভব হয়নি।
বাণিজ্যিক সংশিষ্টরা জানান, ভারত-বাংলাদেশ স্থলবাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই বেনাপোল বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। এই বন্দরের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয় এবং সরকার সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে।
চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৫,৩৪,৩৪০.২১ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও রাজস্ব আদায় বেড়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারি, সঠিক শুল্কায়ন ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলেই এই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কমিশনার মো. কামরুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে আমদানি পরিমাণে প্রায় ৮ শতাংশ হ্রাস পেলেও রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৫১ শতাংশ। এটা বেনাপোল কাস্টমস হাউসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
সাধারণ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমদানিযোগ্য পণ্য শুর্কফাঁকি দিয়ে ল্যাগেজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে। বৈধ আমদানি পণ্যের সাথেও দূনীতিবাজ ব্যবসায়ীরা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্কফাঁকি দিচ্ছে। এসব অনিয়ম বন্ধ করতে পারলে লক্ষমাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।
বেনাপোল আমদানি, রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, পদ্মা সেতু পণ্য পরিবহন সহজ করে দেওয়ায় আমদানি সহজ করেছে। এছাড়া বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও বেশি শুল্ক আহরণ হয় এমন পণ্য আমদানি বেনাপোল বন্দর দিয়ে বেড়েছে। সঠিকভাবে শুল্ক আদায় স্বচ্ছতা বাড়ায় রাজস্ব আয় বেড়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামসুর রহমান জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি এবং ১৫০-২০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর অবস্থানে থাকায় অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসে সার্বিক আমদানির পরিমাণ ৮ শতাংশ কম হলেও রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ ১৪ শতাংশ। এটি হাউজের উল্লেখযোগ্য অর্জন। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকি রোধে এ বন্দরে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করায় শুল্ক ফাকির প্রবণতা কমে গেছে। কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে রাজস্ব আদায়সহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে, যা ভবিষ্যতে কার্যক্রম আরও গতিশীল এবং রাজস্ব আয় বাড়াতে ভুমিকা রাখবে।
ভোরের আকাশ/জাআ