মহিউদ্দিন সুমন, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৫ ১০:২২ পিএম
ঈদ আনন্দে যমুনা সেতু পূর্বপাড়ে বিনোদন প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়
যান্ত্রিক জীবনে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে পরিবার-পরিজন ও প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঈদুল আযহার আনন্দকে উপভোগ করতে মেতেছে বিনোদন প্রেমীরা।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের যমুনা সেতু পূর্ব পাড়ে যমুনা নদীর তীরবর্তী গরিলাবাড়ী এলাকার পাথরঘাটে গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। এ ছাড়া যমুনা নদীর ওপর সদ্য নির্মিত যমুনা রেল সেতু দেখতে ছুটে আসছেন টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসে বিনোদন প্রেমী হাজারো মানুষ। এই বিনোদন কেন্দ্রে সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখা মেলায় প্রকৃতির পরিবেশ হয়ে ওঠেছে আরও মনোরম।
সারজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনা সেতু, আনন্দ পার্ক, যমুনা সেতু রিসোর্ট, যমুনা সেতু জাদুঘর, শিশু পার্ক, যমুনা সেনানিবাস কপি হাউজ ও বিপণী-বিতান মার্কেট, সুইমিংপুল, যমুনা সেতু পূর্ব গোল চত্বরে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ।
ঈদের তৃতীয় দিনে যমুনাপাড়ে কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। কেউ সেলফি তুলছেন, আবার কেউ গা ভাসাচ্ছেন যমুনা জলরাশিতে। ট্রলারযোগে গান বাজিয়ে তীর ঘেঁষে এদিক-সেদিক ছুটছে কিশোর-যুবকেরা। সবাই ঈদ আনন্দে উৎফুল্ল। নদীতীরের নয়নাভিরাম পরিবেশ আর মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে যমুনা পাড় ।
পাথরঘাটে অসংখ্য নৌকা ও ট্রলার সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন মাঝিরা। তারা দর্শনার্থীদের জন্য নৌকা বা ছোট ট্রলারযোগে যমুনা নদী পথে যমুনা সেতু ও যমুনা রেল সেতু খুব কাছ থেকে দেখার সুব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
এই বিনোদন কেন্দ্রকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের খেলনা দোকান, ফাস্টফুড, ফুসকা সহ বিভিন্ন খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। দর্শনার্থীরা যমুনা নদী ভ্রমণ শেষে এ সব দোকানে খাবার খাচ্ছে।
যমুনা সেতু পূর্বপাড়ের পাথরঘাট এলাকায় বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যমুনার পাড়ে পরিবার-পরিজন কেউ কেউ সূর্যাস্ত দেখছেন। আবার কেউ তাদের পছন্দের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। এখানে নৌকা বা ট্রলার দিয়ে ঘুরতে জনপ্রতি ৫০ টাকা দিয়ে যমুনা সেতু ও যমুনা রেল সেতু দেখছেন খুব কাছ থেকে। এছাড়াও কেউ আবার মোটরসাইকেলযোগে যমুনা থেকে উপরে ঘুরছেন ও রেল সেতু দেখছেন। অনেকেই শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলনা কিনছেন। সব মিলিয়ে বিকালে এই সেতু পূর্ব এলাকায় মানুষের উপচে পড়া ঢল নেমে যায়।
গাজীপুর থেকে ঘুরতে আসা ইশারাত আক্তার বলেন, সারা বছর চাকরি ও সংসার জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। ঈদের দিন আমাদের কাছে বিশেষ একটি আনন্দের দিন। তাই ঈদের আনন্দ পরিবার ও সন্তানদের সঙ্গে উপভোগ করতে যমুনা সেতু পূর্বপাড়ে আসছি। এখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম দেখা যাচ্ছে। খুব ভাল লাগছে এখানে ঘুরতে এসে। প্রতি উৎসবেই ঘুরতে আসব এখানে। তাছাড়া এই বিনোদন কেন্দ্র কম খরচে বিভিন্ন স্পটও ঘুরে দেখা যাচ্ছে। পরিবেশটাও অনেক ভালো।
কয়েকজন হকার ও খাবার বিক্রেতা জানান, যমুনা সেতু ও রেল সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে। এবারে ঈদের লম্বা ছুটি থাকার কারণে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে তাদের বেচাকেনা অনেক ভালো।
বগুড়ার থেকে আসা স্কুল শিক্ষক শহিদুর ইসলাম বলেন, এর আগে কখনো যমুনা সেতু দেখতে পরিবার নিয়ে আসা হয়নি। এবার যেহেতু লম্বা ছুটি পেয়েছি তাই ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে আসছি। পরিবারের লোকজন এই প্রথম যমুনা সেতু সরাসরি কাছ থেকে দেখতে পেল। এখানে এসে খুব ভাল লাগছে। বাচ্চারাও অনেক আনন্দ উল্লাস করছে। দীর্ঘদিন ধরে এটি যেহেতু বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাভ পেয়েছে, তাই সরকারের উচিত যমুনা সেতু এই এলাকাটি পর্যটন শিল্পে আরও বিকাশ ঘটানো। এতে আরও লোকজনের সমাগত হবে বলে মনে করেন তিনি ।
স্থানীয় সমাজকর্মী রেহানা পারভীন সুমি বলেন, যমুনা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর থেকে এই সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে। বর্তমানে আরেকটি যুক্ত হয়েছে সেটি হলো সদ্য নির্মিত যমুনা রেল সেতু। টাঙ্গাইলে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় যমুনা সেতু এলাকাকে বেছে নেন বিনোদন প্রেমীরা। তবে, বিনোদন কেন্দ্রের মান তেমনটা উন্নত নয়। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে এখানে দেশের বৃহত্তম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবে সরকার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
যমুনা সেতু পূর্ব নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ কামাল হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষে এখানে দর্শনার্থীদের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ দর্শনার্থীসহ রাজনীতিবিদসহ দেশের বিশিষ্ট জনদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও যমুনা সেতু পূর্ব নৌ পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
তিনি আরো জানান, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় আমাদের পুলিশ টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎরপর। তবে এখন পর্যন্ত ঘুরতে আসা কোনো দর্শনার্থী কোন প্রকার হয়রানিমূলক অভিযোগ আমাদের কাছে করেনি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/জাআ