টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫ ০৩:০০ পিএম
৫ বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণ, ভোগান্তিতে ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ
টাঙ্গাইলের বাসাইলে ঝিনাই নদীর ওপর একটি ব্রিজের নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। প্রায় ছয় মাস আগে কাজটি ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। নদীটির দুই পাড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হতে হচ্ছে।
জানা গেছে, বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার সংযোগস্থল কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া এলাকায় ঝিনাই নদীর ওপর ব্রিজটি প্রায় ১০ বছর আগে পানির স্রোতে ভেঙে যায়। এরপর ২০২০ সালে ২৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮ টাকা ব্যয়ে সেখানে নতুন করে ২৫৬ মিটার গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন হয়। কাজটি পায় ‘হায়দার কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড মো. লিয়াকত আলী জেবি’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটি ওই বছরের ১৮ মার্চ নতুন ব্রিজের কাজ শুরু করে। নির্মাণকাজ ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ পাঁচ বছরেও তা শেষ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ছয় মাস আগে নির্মাণকাজ ফেলে রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। এই দীর্ঘ ছয় মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ ব্রিজটি দেখতেও আসেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল আলম খান বলেন, এই ব্রিজটি বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার জন্য খুবই জরুরি। এই ব্রিজ দিয়ে লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। এখানে একটি ঈদগাহ মাঠ রয়েছে, সেখানে ছয়টি গ্রামের মানুষ একত্রে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য একটি কবরস্থান রয়েছে। মানুষ মারা গেলে প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক ঘুরে বা নৌকায় করে লাশ নিয়ে দাফন করতে হয়। নদীর দুই পাড়ে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় ছয় বছর ধরে ব্রিজের নির্মাণকাজ চলমান ছিল। এই দীর্ঘ সময়েও কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এমতাবস্থায় প্রায় ছয় মাস হলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজের নির্মাণকাজ বন্ধ করে পালিয়ে গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুজ্জামান বলেন, কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়ায় ঝিনাই নদীর ওপর ২৫৬ মিটার ব্রিজের কাজটি ২০১৯ সালে টেন্ডার হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরুতেই বিলম্বে কাজ শুরু করে। প্রথমে কাজের কিছুটা অগ্রগতি ছিল। এক বছর পর থেকে কাজের গতি কমে যায়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি।
তিনি জানিয়েছেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি যথাসময়ে কাজ না করে, তাহলে টেন্ডার বাতিল করা হবে।’ ব্রিজটির কারণে অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
বাসাইল উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাত্তাউর রহমান বলেন, বাসাইল উপজেলার কাজিরাপাড়ায় ঝিনাই নদীর ওপর ২৫৬ মিটার ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে এর অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। বেশ কিছুদিন ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কাজ শুরু করে আবার বন্ধ করে দেয়। কাজটি বাতিলের জন্য আমাদের জেলা কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রয়েছে, তাই কাজটি বাতিলের জন্য আবার সুপারিশ করা হবে। কাজ বন্ধ রাখায় ঠিকাদারকে জরিমানার আওতায় আনার প্রস্তাব করা হবে। পুনরায় টেন্ডার করে খুব দ্রুত কাজটি শেষ করা হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. আখতার হোসেন বলেন, আমাদের ব্যাংকিংয়ে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য কাজটি বন্ধ রয়েছে। আমাদের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের চুক্তি রয়েছে। সেখানে আমার একটি বিল আটকে আছে। ব্যাংকিং সমস্যা সমাধান না হলে ব্রিজের কাজটি করতে পারছি না।
ইউএনও মোছা. আকলিমা বেগম বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। মূলত ঠিকাদারের কারণে কাজটি বন্ধ রয়েছে। তার প্রেক্ষিতে ঠিকাদারকে সর্বশেষ পত্র দেওয়া হয়েছে কাজটি করার জন্য। ঠিকাদার কাজটি না করলে পুনরায় টেন্ডার করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কাজটি দ্রুত শেষ করবেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ