বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫ ১১:২৫ এএম
ছবি: ভোরের আকাশ
তিন মাসের দীর্ঘ বিরতির পর রোববার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে আবারও খুলছে সুন্দরবনের দ্বার। বন বিভাগের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় নদ-নদীতে জেলেদের জাল পড়বে, পর্যটকরা ফিরবেন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের বুকে। নতুন উদ্যমে শুরু হবে জীবিকার লড়াই, আবারও জেগে উঠবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো ।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরের মতোই ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে জেলেদের মাছ ধরা, নৌযান চলাচল ও পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় টানা তিন মাস বন্ধ রাখা হয় এই বন। এ সময়ে জেলে ও বনজীবীরা আয়-রোজগার থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন ।
শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার তিন মাস ছিল তাদের জন্য অর্ধাহার-অনাহারের সময়। সামান্য সরকারি সহায়তা পেলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারা বলেন, “তিন মাসের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে আমাদের পরিবারগুলো বেঁচে থাকতে পারে। এ সময়টা সত্যিই অসহনীয়। তাই নিষেধাজ্ঞা দুই মাসে কমানো ও জেলেদের বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”
মোংলার চিলা এলাকার জেলে বিদ্যুৎ মন্ডল ও আব্দুর রশিদ জানান, পরিবার চালাতে গিয়ে তারা এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন। এখন নতুন মরশুমে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য ট্রলার, জাল ও খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত রেখেছেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, পর্যটকদের জন্য ১১টি পর্যটনকেন্দ্র—কটকা, কচিখালী, করমজল, হারবাড়িয়া ও আন্ধারমানিকসহ সবগুলোতে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, “তিন মাস লোকসমাগম না থাকায় হরিণ ও বানরসহ বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে। এখন সকাল-বিকালে হরিণের দল সহজেই চোখে পড়ে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যে সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, জেলে ও পর্যটকদের বরণ করতে বন বিভাগ প্রস্তুত। এ বছর মৎস্যজীবীদের খাদ্য সহায়তার তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যা যাচাই করছে মৎস্য দফতর। আগামী বছর থেকে জেলেরা সরাসরি খাদ্য সহায়তা পাবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতিবছরের মতো এবারও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবন বন্ধ রাখা হয়। এই সময়ে মাছের প্রজনন বেড়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী প্রতিবছর তিন মাস এ নিষেধাজ্ঞা চালু রাখা হয়।”
আজ থেকে আবারও বনের নদীতে নামবে হাজারো ট্রলার, ভিড় করবে পর্যটকবাহী নৌকা। নতুন মৌসুমের আশায় জেলেরা জাল ফেলবেন, আর পর্যটকরা উপভোগ করবেন বনের অপার সৌন্দর্য। তিন মাসের কঠিন বিরতির পর সুন্দরবনের দ্বার খুলে যাওয়া তাই শুধু বনজীবীদের নয়, উপকূলীয় অর্থনীতির জন্যও এক নবজাগরণের বার্তা হয়ে এসেছে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.