মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫ ০৫:০৩ পিএম
২৯ দিনেও বরাদ্দের চাল পাননি জেলেরা
সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার ২৯ দিন অতিবাহিত হলেও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার ৬৩ হাজার ১৯৩ জন নিবন্ধিত জেলে এখনও ভিজিএফের খাদ্যসহায়তা (চাল) পাননি। নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমুদ্রে মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা। আয়-রোজগার বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব জেলেরা। এমতাবস্থায় হতদরিদ্র জেলে পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধ অসুস্থ লোকজন খুবই অসহায়ত্বের সাথে দিনাতিপাত করছেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) কক্সবাজারের জেলে পল্লী গুলো ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিবারগুলোয় চলছে চরম খাদ্যসংকট। অনেক পরিবারে খাবার জুটছে এক বেলা। কিছু জেলে নদী তীরের বেড়িবাঁধ ও পাশের বালুচরে বসে মাছ ধরার জাল মেরামত করছেন। অনেকের সময় কাটছে অলস। আবার অনেকে ক্ষণিকের জন্য পেশা পরিবর্তন করে ইনকামের পথ তৈরি করেছেন।
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ও জালিয়াপাড়ার জেলে রহমান আজহার ও মুজিব উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির গুলি ও অপহরণের কারণে পাঁচ-ছয় মাস ধরে তাঁরা সাগর ও নাফ নদীতে মাছ ধরতে পারেননি। মাছ ধরতে গিয়ে ইতিমধ্যে দুই শতাধিক জেলেকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী।
টেকনাফ ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম বলেন, বিজিবির তৎপরতায় সম্প্রতি কয়েক দফায় অপহৃত শতাধিক বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত আনা গেলেও অনেকের খোঁজ নেই। তাতে অপহৃত জেলে পরিবারে এক দিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অন্যদিকে সরকারি বরাদ্দের চাল না পেয়ে হতাশা বিরাজ করছে।
শাহপরীর দ্বীপের ট্রলারমালিক আবদুল আমিন ও স্থানীয় সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, দীর্ঘ সময় মাছ ধরতে না পেরে এমনিতে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরও সরকারি বরাদ্দের চাল না পেয়ে উপজেলার অন্তত ১২ হাজার জেলে দিশেহারা। এখন বহু পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছেন।
মহেশখালীর কুতুবজুম ইউনিয়নের জেলে রহিম উদ্দিন বলেন, আমরা এখনো সরকারি বরাদ্দের চাল পায়নি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে, তারা জানান বরাদ্দের চাল আসেনি। গত বছরে নিষেধাজ্ঞা শুরুর দুই সপ্তাহের মাথায় বরাদ্দের চাল হাতে পাওয়া যায় ।
এদিকে উপজেলার হোয়ানক, মাতারবাড়ী, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, গোরকঘাটা, শাপলাপুর ইউনিয়নের শত শত জেলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, মহেশখালীতে জেলে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এর মধ্যে মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৩২।
মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাহাদুল ইসলাম বলেন, সরকারি বরাদ্দ চাল হাতে পৌঁছেনি। চাল হাতে আসলে জেলেদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।
কুতুবদিয়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলাতেও নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি। কেউ সরকারি বরাদ্দের চাল পায়নি।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলার ছোট-বড় ছয় হাজার ট্রলারে জেলে শ্রমিক রয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজারের মতো। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগের তিন মাস প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈরী পরিবেশের কারণে ৯০ শতাংশ জেলে সাগরে মাছ ধরতে পারেনি। নিষেধাজ্ঞার ২৯ দিন অতিক্রান্ত হলেও জেলেরা চাল হাতে পাচ্ছেন না। আগামী ১২ জুন সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, এবারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞাতে (১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত) জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলেকে দুই ধাপে ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণের কথা। প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কেজি।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, সরকারি বরাদ্দের চাল পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। বরাদ্দের চাল হাতে পাওয়া মাত্র দ্রুত জেলেদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীতে মাছ আহরণের ওপর ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে। নিষেধাজ্ঞার ২৮ দিন অতিবাহিত হলেও বুধবার (১৪ মে) পর্যন্ত কক্সবাজারের প্রায় জেলে পরিবার সরকারি বরাদ্দের চাল পাননি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতিজন জেলেকে ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণের কথা।
ভোরের আকাশ/এসআই