পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ০৪:৪৩ পিএম
পীরগঞ্জে ল্যাম্পি স্কীন ভাইরাসে ফাঁকা কৃষকের গোয়াল!
রংপুরের পীরগঞ্জে ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ নামে নতুন ভাইরাসে ফাঁকা হচ্ছে কৃষকের গোয়াল ঘর। এ রোগের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না অল্প বয়সের বাছুর এমনকি স্বাস্থ্যবান গরুও। চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে শত শত গরু। ফলে হতাশায় ভুগছেন গবাদিপশুর মালিকরা।
উপজেলার অধিকাংশ কৃষকদের সংসারের একমাত্র সহায় সম্বল গরু। পল্লী অঞ্চলের কৃষক সারা বছর চাষাবাদ করে। আর এই চাষাবাদের অর্থ যোগান দেয় তাদের ঘরে লালন-পালন করা গবাদী পশু গরু। অধিকাংশ কৃষক চাষাবাদে বেশিরভাগ সময় লোকসান গুনে থাকে। বছর শেষে লোকসানের বোঝা হালকা করে থাকে এই গরু।
সাম্প্রতিক সময়ে সেই গরুর নতুন আতংক লাম্পি স্কিন ডিজিস ভাইরাস। রংপুরের পীরগঞ্জে ১টি পৌরসভাসহ ১৫ টি ইউনিয়নে গরুর লাম্পি স্কিন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) নামের রোগে।
সরেজমিনে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে কথা হয় একাধিক গরু মালিকের সাথে।
ভুক্তভোগীরা জানান, এ রোগ এতোটাই ভয়াবহ যে ঔষধ কোন কাজই করে না। সুস্থ সবল গরু সন্ধ্যায় গোয়াল ঘরে তুলে রেখে পরদিন সকালে গিয়ে দেখা যায় গরুর গোটা শরীর ফুলে গেছে। খুড়িয়ে হাটছে। ফুলে যাওয়া স্থানগুলো দু’এক দিনের মধ্যেই চামড়ার নিচে ফোস্কা পড়ার মতো হয় পরে দগদগে ঘা হয়। এরপর ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হয়। পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মলম, তেল, পাউডার জাতীয় কেন্ডুলা ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসা করেও অধিকাংশ গরু মারা যায়। বিশেষ করে শংকর জাতের ছোট বাছুর গুলোকে এই রোগে আক্রান্ত হলে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না।
ভুক্তভোগী কৃষকরা বলেন, চিকিৎসকের অভাবে লাম্পি স্কিনের স্থানীয় হাতুড়ী চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষ কে বোকা বানিয়ে এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন পুশ করে ইচ্ছে মতো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও এলাকায় কিছু হোমিও চিকিৎসকও এক হাতে টাকা আরেক হাতে পানি পড়া দিয়ে টাকা নিচ্ছেন। এসব চিকিৎসার ব্যপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে ব্যপক প্রচারের প্রয়োজন থাকলেও তা করা হয় না। উল্টো গ্রামে-মহল্লায় তাদের দেখাই মেলে না। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন হাতুড়ে চিকিৎসকগণ।
উপজেলার কাবিলপুর ইউপি’র জামালপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম, সাজেদুল বারী, বাদল মিয়া, ইয়াকুব আলী, আনোয়ার হোসেন, সমশের আলী, আজাদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, বাদশা মিয়া, হোসেন আলী, আনরুলের ১টি করে গরু ১ সপ্তাহের মধ্যে মারা গেছে। এছাড়াও কৃষ্ণুপুর গ্রামের রিপন মিয়া, জাহিদুল ইসলাম, মতিয়ার মিয়া, রাসেদুল ইসলাম। চতরা ইউনিয়নের সোন্দলপুর গ্রামের হাবিবর, সোনাতলা গ্রামের নওফেল হোসেন, বড়আলমপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মমদেল হোসেনের একটি করে গররু মারা গেছে।
শানেরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম জানান, গত মাসে আমার ১টি বাছুর ও বড় ভাইয়ের একটি বাছুর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই ইউপি’র বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে প্রায় সকল বাড়িতে এই রোগের প্রার্দুভাব আছে।
রায়তীসাদুল্যাপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, আমার দু’টি বাছুর গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসা করে অনেক টাকা ব্যয় করেও কোন ফল হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিস্পদ কর্মকর্তা ডা. ফজলুল কবির বলেন, ‘লাম্পি স্কিন রোগের চিকিৎসার জন্য সরকার কাজ করছে। এ রোগের ভ্যাকসিন হাতে পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। লাম্পি স্কিন ডিজিজ নিয়ে আমরা সাধারণত খামারিদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছি।
ভোরের আকাশ/এসআই