ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫ ০১:৫৬ পিএম
ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল ও চিকিৎসাসরঞ্জাম সংকটে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখনকার লাখো মানুষ।
১৯৯৭ সালে ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাটে স্থাপিত ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু করা হয়। এর দুই যুগ পরে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ২০১৭ সালে হাসপাতালের কলেবর বৃদ্ধিতে ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯ শয্যার নতুন একটি ছয় তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নির্মাণের শর্তানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস ডালি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ২০১৯ সালে ৬ তলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও ৬ বছর পরে শেষ হয় ভবনটির নির্মাণ কাজ।
ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করিম জানান, নবনির্মিত ভবনে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম জুলাইয়ের শুরুতে পরিচালনা করার চিন্তাভাবনা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বহিঃ বিভাগ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করতে নতুন ভবনে আসবাবপত্র স্থানান্তরের কাজ চলছে।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার, বিভিন্ন পর্যায়ের জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে সুচিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার গ্রাম ও ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাঠামো অনুযায়ী ২ জন মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে একজন দায়িত্ব পালন করছেন, অন্য পদটি শূন্য। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), গাইনী ও সার্জারী কনসালটেন্ট পদও শূন্য রয়েছে। এদিকে কর্তৃপক্ষের অনুমতিবিহীন দুই চিকিৎসক ডা. এবিএম সানজিদ ও ডা. নাফিজা আনজুম বিদেশে রয়েছেন।
উপজেলায় স্থাপিত ৩টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ৩ জন মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে ২ জন রয়েছে, খালি রয়েছে ফুলগাজী সদর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। অন্যদিকে ৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ৩ জন মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে ২ জন রয়েছে, খালি রয়েছে আনন্দপুর কেন্দ্র।
হাসপাতালের রোগীদের দেখভাল করার জন্য সেবক-সেবিকার ২৫টি পদের মধ্যে ৭টি পদ খালি, মিডওয়াইফ পদে ৪টির মধ্যে ২টি পদ খালি, আয়া ও ওয়ার্ড বয়ের ৬টি পদের বিপরীতে ৫টি পদ খালি রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ৫টি পদের বিপরীতে ৪টি শূন্য। সিকিউরিটি গার্ড পদের ২টির মধ্যে ২টি পদই শূন্য। অফিস সহকারী ৪টি পদই শূন্য রয়েছে। নেই অফিসের প্রধান সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ ও স্টোর কিপার। নতুন অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হলেও চালক না থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে ভুক্তভোগীরা।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগে জনবল না থাকায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে গাইনি, সার্জারি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তথা সিনিয়র কনসালট্যান্টের পদে জরুরি লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবসময়ই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। তাদের সেবা দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও বাকিদের হিমশিম খেতে হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথাযথ সেবা না পেয়ে অনেক রোগী চলে যাচ্ছেন স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবেও বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডাক্তার। অন্যদিকে বহুবছরের পুরনো একটি এক্সরে মেশিন থাকলেও সেটি সম্পূর্ণ অকেজো অবস্থায় রয়েছে, নেই এক্সরে মেশিন পরিচালনার রেডিওগ্রাফার। যে কারণেই কাঙ্খিত রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রত্যাশিত সেবা না পেয়ে অনেকে দালালদের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে যান স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে। ফলে তারা বিভিন্ন সময় অতিরিক অর্থ ব্যয় করেও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও হাসপাতালে সামনে থাকা ক্লিনিক গুলোর নির্ধারিত লোকেরা হাসপাতালের ভিতরে বিভিন্ন রোগীদের ক্লিনিক থেকে সেবা নিতে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া জানান, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের জনবল সংকট রয়েছে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ওয়ার্ড বয় জরুরি প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, আমরা ডাক্তাররা শুধু পরিশ্রম করলেই সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারি না, হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সচল থাকা, ওষুধ সরবরাহ থাকা, সব মিলিয়েই আমরা খুব ভালো একটা সেবা দিতে পারি। অনেক অপূর্ণতার মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা চেষ্টা করছি।
ভোরের আকাশ/আজাসা