সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫ ০২:০৯ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
যাদের ডাকে সারা দিয়ে আমাদের সন্তানেরা প্রাণ দিয়েছে তারা আজ ক্ষমতা নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের আহাজারি শুনবে কে? যারা শহীদ হয়েছে তাদের বিপ্লবী যোদ্ধার খেতাব দেয়ার দাবি জানানো হলেও সেটি এখনো দেয়া হয়নি। আর কবে তাদের জুলাই যোদ্ধার খেতাব দেয়া হবে? তাদের পরিচয়, জীবনী, অবদান সবার কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা করা হবে। যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে তাঁরা এদেশেই ঘুরে বেরাচ্ছে আর আমাদের মায়েদের চোখের পানি ঝরছে। দৈনিক ভোরের আকশকে জানান গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আলিফ আহমেদের (১৫) মা তানিয়া আক্তার।
সাভারের ইসলামনগর এলাকায় থাকেন গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ আলিফ আহমেদের (১৫) পরিবার। আলিফের কক্ষটি ঠিক আগের মতোই গুছিয়ে রেখেছেন মা তানিয়া আক্তার। ঘরের দেয়ালে ঝুলানো রয়েছে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলায় বিভিন্ন সময়ে পাওয়া মেডেল। পড়ার টেবিলে রাখা বই খাতাসহ সম্মাননা স্মারক, সার্টিফিকেট। টেবিলের পাশের দেয়ালে স্কচটেপ দিয়ে উত্তর কোরিয়ার রহস্যময় রুম থার্টি নাইন, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ব্রাদার্স আইল্যান্ড, মস্কোর মেট্টোরেল-২, ব্রাজিলের স্নেক আইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের দর্শনীয় স্থানের তাঁর লাগানো বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং। আলিফ সাভারের ডেইরি ফার্ম হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আনন্দ মিছিলে যোগ দেয় আলিফ আহমেদ (সিয়াম)। সাভার থানাস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। ৭ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলিফের মৃত্যু হয়।
আলিফ আহম্মদ সিয়াম (১৫) গ্রামেরবাড়ি বাগেরহাট সদর থানাধীন বড় বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বুলবুল কবির ও মাতা তানিয়া আক্তার দম্পতির একমাত্র ছেলে। সাভারের ইসলামনগরে জুয়েলের বাড়িতে ভাড়াবাসায় থেকে ডেইরী ফার্ম হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল এবং ২০২৫ এর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
তাঁর মা তানিয়া আক্তার জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যখন "লং মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচি ঘোষণা আসে সিয়াম ৫ আগস্ট বেলা ১১ টার দিকে সেই কর্মসূচি পালনে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আন্দোলন করতে করতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে সাভার থানা স্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজের নীচে পৌছলে আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। পরে একটি বুলেট এসে লাগে সিয়ামের মাথায়। গুলিবিদ্ধ সিয়ামকে আন্দোলনকারীরা উদ্ধার করে স্থানীয় ল্যাব জোন হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৭ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মারা যায় সিয়াম।
শহীদ সিয়ামের মা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে বড় হয়ে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখত। পাইলট হয়ে আমাদের নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবে। বাবা-মাকে হজ্ব করাবে। কিন্তু হাসিনা সরকারের নিষ্ঠুরতায় আমার ছেলে শহীদ হল।
তানিয়া আক্তার বলেন, আমার আলিফকে যারা কেড়ে নিয়ে গেছে। নির্মমভাবে যারা তাকে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। একটা বছর ধরে অপেক্ষা করে বসে আছি। এই বুঝি আলিফ এসে মা বলে ডাকবে। আমার অপেক্ষা আর শেষ হয় না। আমার বাবাকে কেউ এনে দিত পারলো না। সে ফিরে এসে বলতে পারলো না মা দেখ আমি দেশ স্বাধীন করেছি। বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। তার পাইলট হওয়ার স্বপ্নটা আর পূরণ হলো না।
শহীদ আলিফ আহম্মদ সিয়ামের বাবা বুলবুল কবীর বলেন, আমরা শুধু সকল শহীদদের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই। সেই সাথে আমার ছেলে সহ আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে অথবা নিজ জেলায় বিভিন্ন স্থাপনা যেমন স্টেডিয়াম, সড়কসহ স্কুল-কলেজের নামকরণ করা হয়। বিচার হলে হয়তো কিছুটা শান্তি পাবো আমরা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ