কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৩:১০ পিএম
ছবি : ভোরের আকাশ
সিলেটের দীর্ঘতম দৃষ্টিনন্দন ধলাই সেতুর পাশে থেকে বালু উত্তোলনে শংকায় পড়েছে সেতুটির ভবিষ্যৎ। তাই ব্রিজ বাঁচাতে এলাকাবাসীসহ উপজেলার সব রাজনৈতিক,সামাজিক, ব্যবসায়ী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ,মিছিল,স্মারকলিপি দিয়েছেন বহুদিন ধরে। বালুখেকোদের হুমকি, ধমকিতে এখন সবাই ক্লান্ত।
আলোচিত সাদাপাথরকাণ্ডে তৎকালীন জেলা প্রশাসক,উপজেলা প্রশাসন,ওসি কর্তাগণের অবহেলা ও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে প্রত্যাহার করা হয় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে।
নবাগত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ইউএনও ওসি যোগদানের ফলে অনেকটা সরব হলেও থামানো যাচ্ছে না বালু লুটপাটকারীদের তাণ্ডব। এতে সেতুটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা সংকট চরমে।
সরেজমিন পরিদর্শনে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ধলাইর দক্ষিণ বালু মহাল লিজ গ্রহীতা, নদীর তীর ও সেতু সংলগ্ন এলাকার কয়েকটি গ্রুপ সিন্ডিকেট তৈরি করে ১০/১২ টাকা ফুটে শত শত ষ্টীলবডিতে দিন/রাতে বেচাকেনা হয়।এতে কয়েক হাজার ফুট বালু বিক্রিতে প্রতিদিন কয়েক লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বালু খেঁকো চক্র।
যন্ত্রদানব লিষ্টার ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে ৫০/৭০ ফুট গভীর খাদ করে মধ্য রাত থেকে সকাল ১০ টা অবধি মাঝারি নৌকা থেকে শুরু করে ষ্টীলবডি বড় নৌকায় দেদারসে সেতু এলাকা ও তীরবর্তী বাড়িঘর ধ্বংস করে নদী গর্ভে বিলীন করে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সেতুটির যেকোনো মুহূর্তে পিলার হেলে পড়লে বৃহৎ এলাকার একমাত্র সহজতম মাধ্যম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আরোও বিলীনের পথে কলাবাড়ী খেলার মাঠ ও কবরস্থানসহ বসতবাড়ি।
স্থানীয় ব্রিজ রক্ষা আন্দোলন কমিটির পক্ষে এলাকাবাসী লুটপাটের চিত্র উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করলে তাৎক্ষণিক অভিযানের খবর চাউর হয়ে যায় কোন এক অদৃশ্য যোগসাজশে। তবুও নয়া উপজেলা প্রশাসন টাস্কফোর্স মাধ্যমে চলমান ১৫ দিনে অন্তত ১০ টি অভিযানে ২০/২২ জন ব্যক্তি ছোটবড় ১৫ টির মতো ষ্টীলবডি ও নৌকা আটকসহ জেল জরিমানা দেন। এতসব অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না বালু খেকোদের দৌরাত্ম্য একদিকে অভিযান শেষ হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পরেই ফের শুরু বালু তুলার হিড়িক। এ যেন সেতু এলাকার বালু খেকো ও উপজেলা প্রশাসনের যুদ্ধাবস্থার শামিল।
এলাকাবাসী তথা ব্রিজ রক্ষা আন্দোলন কমিটির পক্ষে কয়েকজন দাবি করেন সেতুটি হুমকির সম্মুখীন হতে বাঁচতে জেলা, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত সেতু হতে ৫০০ মিটার দূরত্ব সীমানা আনুষ্ঠানিক চিহ্নিতকরণ জরুরি। এতে এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন সমন্বয় করে আনুষ্ঠানিক সীমানা পিলার ফ্ল্যাগ স্থাপন ও স্থায়ী পুলিশ টহল না হলে এর গুরুত্ব ও বালুখেকোদের পেশীশক্তিকে দমানো সম্ভব হবে না।
এদিকে সেতু সংলগ্ন তীরবর্তী কলাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ফয়জুল হক নামের এক ব্যক্তি তার বাড়িঘরের পাশে বালু উত্তোলন এর ফলে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলা প্রশাসন বরাবর। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন কয়েকদিন ধরে পার্শ্ববর্তী বালু বিক্রয়কারী একটি গ্রুপ কোটি টাকার বিনিময়ে দখলীয় খাস জমি মূল বালু উত্তোলন সিন্ডিকেট এর কাছে বিক্রি করে। এতে পার্শ্ববর্তী দখল স্থানে অভিযোগকারীর বাড়িঘর বিদ্যমান। এমতাবস্থায় গভীর রাতে জোরপূর্বক আবেদনকারীর বাড়ির পাশ হতে বালু তোলায় হুমকির সম্মুখীন এতে নিষেধ বাধা দিলে বালু উত্তোলনকারী দল হুমকি দেয়। যা কে বা কারা আবেদনটিতে নাম ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বলে আবেদনে দেখা যায়। ভুক্তভোগী ফয়জুল প্রশাসন কর্তৃক সব নিরাপত্তার বিষয়ে সহায়তা কামনা করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোলাগঞ্জ, ডাকঘর,নোয়াগাংগের পার,পাড়ুয়া ডাকঘর এলাকার কয়েকটি গ্রুপে সেতু এলাকায় দখলিকৃত অজুহাতে মূল বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের কাছে স্বল্পমূল্যে দিন রাত বালু উত্তোলনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। এতে সেতুসহ নদীতীরের এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত যা ভবিষ্যৎ সংকট চরমে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনের স্থায়ী নজরদারি বাড়ানোর দাবিও জানাচ্ছেন ব্রিজ রক্ষা আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দসহ উপজেলার সুশীল সমাজ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিন মিয়া প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, ধলাই সেতু রক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিনিয়ত অভিযান চলমান সেতুর পাশে বালু উত্তোলব কারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে এবং শীঘ্রই গুরুত্বপূর্ণ ধলাই সেতু রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন এর পক্ষ হতে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানোর প্রক্রিয়া চলমান।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. রতন শেখ জানান, সেতু রক্ষায় এলাকাবাসীর দুর্বলতাকে দায়ী করেন, তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন স্থানীয় ৯৫ ভাগ বাসিন্দা অর্থলোভে বালু লুটপাটের সাথে জড়িত, তাদের আস্কারায়ই শতশত নৌকা, ষ্টীলবডি গভীর রাতে হুলি খেলায় থাকে মত্ত!তিনি সার্বক্ষণিক পুলিশি নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন তবে সামাজিক আন্দোলন এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ধলাই সেতু সিলেটের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতুটি ২০০৪-০৬ অর্থ বছরে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান এর একান্ত প্রচেষ্টার ফলে পূর্ব ধলাইর দুটি ইউনিয়ন এর লক্ষাধিক মানুষের প্রাণের দাবি বাস্তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে দেন চলাচলের জন্য। ফলে এখন ব্যবসা,যাতায়াত,সহ সবমিলিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেতুটি রক্ষা।
ভোরের আকাশ/মো.আ.