মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫ ০৬:১৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় আড়াই ফুট গভীর একটি গর্তে শিশু সন্তান গোপালকে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শিশুটির মাথা ও হাত দুটি যাতে বাইরে থাকে এমন করে গর্তটি করা হয়েছে। ক্ষুধার সময় প্রচণ্ড কান্নাকাটি করলে মা শিশুটিকে গর্তে ঢুকিয়ে খাওয়ান। দিনের বেশিরভাগ সময় কান্না করলে তাকে ওই গর্তের ভেতরে রেখে বিভিন্ন বিনোদন দেখিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করেন মা। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে।
জানা গেছে, চা শ্রমিক দম্পতির একমাত্র সন্তান গোপাল সাঁওতাল। শিশুটির বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। জন্ম থেকে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। শিশুটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারে না। বসিয়ে রাখলে সে ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকে। তাই খাওয়ানো ও অন্যান্য পরিচর্যার জন্য মা সনচড়িয়া সাঁওতাল প্রায় ৬ মাস আগে ঘরের মেঝেতে ছোট একটা গোলাকার গর্ত করেছেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন গোপালের দাদি কল্পনা সাঁওতাল। মা ঘরের কাজ সামলানোর পাশাপাশি সারাক্ষণ ছেলেকে দেখে রাখেন। বাবা অনিল সাঁওতাল মুরইছড়া চা বাগানে ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। সম্প্রতি কুলাউড়ার অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ ব্যক্তিগত ফেসবুকে এই সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন। এরই সূত্র ধরে রোববার বিকেলে মুরইছড়া চা বাগানের স্কুল টিলা এলাকায় যান ভোরের আকাশ প্রতিবেদক।
সরেজমিনে গিয়ে তিনি দেখেন, রোদ, ঝড় কিংবা বৃষ্টি মাড়িয়ে একটি জীর্ণশীর্ণ ঘরের ভেতর তাদের বসবাস। ঘরের বাহিরে একমাত্র সম্বল কয়েকটি গবাদিপশু রয়েছে। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে প্রতিবন্ধী শিশু গোপালকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আলাপকালে শিশু সন্তান গোপাল সাঁওতালের মা সনচড়িয়া সাঁওতাল জানান, জন্ম থেকেই তার সন্তান শারীরিক, বুদ্ধি, বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। চিকিৎসকরা বলেছেন শিশুটিকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। কিন্তু নিয়মিত নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের। ছেলেটির কান্না আর কষ্ট আমি কী করে সহ্য করি। তাই বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য আড়াই ফুট গভীর এই গর্তটি করেছি। সেখানে ঢুকালে ছেলেটি একটু দাঁড়াতে পারে।
কুলাউড়ার অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিবারে প্রতিবন্ধী ছোট্ট শিশুটি বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকবে সেটা কারও কাম্য হতে পারে না। তার চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায় ছাড়াও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
স্থানীয় কর্মধা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিলভেস্টার পাটাং বলেন, শিক্ষকের মাধ্যমে জেনে ওই পরিবারের খোঁজ নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া যাবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রানেশ চন্দ্র বর্মা ভোরের আকাশকে বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি, শিশুর প্রতিবন্ধী ভাতার কাজ প্রক্রিয়াধীন এবং এ মাসেই ভাতার টাকা পাবে। রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য করা হবে। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র মৌলভীবাজার থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
কুলাউড়ার ইউএনও মো. মহিউদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, বিষয়টি খুবই মানবিক। প্রতিবন্ধী শিশু গোপাল সাঁওতালের খোঁজ নিয়ে সমাজসেবা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতার ব্যবস্থা করব।
ভোরের আকাশ/এসএইচ