বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫ ০৬:০৭ পিএম
বরগুনা তথ্যসেবা: এক তরুণের স্বপ্ন, হাজারো মানুষের ভরসা
রাতে হঠাৎ ছেলেটার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো, ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তখনই এক আত্মীয় 'বরগুনা তথ্যসেবা' অ্যাপের কথা বলল। ডাউনলোড করেই নম্বর পেলাম। অ্যাম্বুলেন্স ফোন দিয়ে ডাক্তারের কাছে ছেলেটাকে নিয়ে গেলাম ছেলেটিকে বাঁচানো গেল। তথ্যসেবা নিয়ে এমনটাই জানালেন বরগুনা সদরের গৃহবধূ পারভীন আক্তার।
এ রকম বহু মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে একটি মোবাইল অ্যাপ, নাম ‘বরগুনা তথ্যসেবা’। জনপ্রিয় অ্যাপটি তৈরি করেছেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ছোনবুনিয়া গ্রামের মো. হযরত আলীর সন্তান মো. রিয়াদ হোসাইন। ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকলেও, নিজের জেলা বরগুনার জন্য একটা দায়বদ্ধতা থেকেই জন্ম নেয় এই উদ্যোগ।
রিয়াদ বলেন, ঢাকায় থাকলেও মনে হয় বরগুনার সাথেই আছি। নিজের মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। তাই ভাবলাম, যদি একটা অ্যাপে জেলার সব দরকারি তথ্য একত্র করা যায়, তাহলে অনেকেই উপকৃত হবে।
বন্ধু আবুবকর ছিদ্দিককে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় তথ্য সংগ্রহের পথচলা। না ছিল বড় কোন টিম, না ছিল অর্থনৈতিক সহায়তা। ছিল কেবল এক গভীর ভালোবাসা। নানা সীমাবদ্ধতা আর চ্যালেঞ্জ পার হয়ে অবশেষে তারা গুগল প্লে-স্টোরে ‘বরগুনা তথ্যসেবা’ অ্যাপটি উন্মুক্ত করতে সক্ষম হন।
এই অ্যাপে যুক্ত হয়েছে ৪৩টি বিভাগের প্রয়োজনীয় নম্বর ও তথ্য—হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন সবই এক ছাদের নিচে। রিয়াদ জানান, প্রথমে শুধু সদর উপজেলা দিয়ে শুরু করেছিলাম, এখন জেলার সব উপজেলা যুক্ত হয়েছে। অ্যাপটি এখন পর্যন্ত কোনো প্রচারণা ছাড়াই ২ হাজারের বেশি মানুষ ডাউনলোড করেছেন। অ্যাপের প্রতি মানুষের আস্থা প্রতিদিনই বাড়ছে।
এ ব্যাপারে আমতলীর কলেজছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যের জন্য অফিসে যেতে হতো, এখন এক ক্লিকেই সব তথ্য হাতে পেয়ে যাই।
পাথরঘাটার তাফালবাড়িয়া এলাকার ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, একদিন আমার দোকানে এক বৃদ্ধ বাবা আসেন। তার চোখে কান্না, কণ্ঠে অসহায়ত্ব। বলেন, তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে সকালবেলা বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। খুব ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তখন আমি বরগুনা তথ্যসেবা অ্যাপ খুলে থানার ওসির নম্বর দেই। তিনি সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তৎপর হয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মেয়েটিকে উদ্ধার করে। সেদিন আমি অনুভব করেছি, এই অ্যাপ শুধু তথ্যের মাধ্যম নয়, এটি সংকটে পাশে দাঁড়ানোর এক শক্তিশালী হাতিয়ার। তালতলীর চরপাড়ার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছিল, আমরা অ্যাপ থেকে ফায়ার সার্ভিস নম্বর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিই। যদি দেরি হতো, বড় দুর্ঘটনা হতো। এই অ্যাপ আর শুধু একটি মোবাইল সফটওয়্যার নয়, বরগুনার মানুষের কাছে এটি এখন এক নির্ভরতার নাম।
অ্যাপ প্রসঙ্গে রিয়াদ বলেন, আমি চাই এই অ্যাপ একদিন বরগুনার তথ্যভান্ডার হয়ে উঠুক। প্রতিটি মানুষের দরকারি সময়ের সঙ্গী হয়ে উঠুক। সেটা করতে পারলেই মনে করব, আমি আমার জেলার প্রতি দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করেছি।
রিয়াদ হোসাইন বর্তমানে ঢাকার ধানমণ্ডিতে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কাজের ফাঁকে এখনও সময় বের করে অ্যাপটির উন্নয়নে যুক্ত থাকেন কারণ এটা শুধু তার কাজ নয়, এটা তার স্বপ্ন।
ভোরের আকাশ/জাআ