লাশের মূল্য ১০ হাজার টাকা
নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৮ পিএম
ফাইল ছবি
পিরোজপুরের নাজিরপুরে পল্লী বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে জড়িয়ে হরিদাসী হালদার (৬০) নামের এক বৃদ্ধা নারী প্রাণ হারালেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে ৬নং নাজিরপুর সদর ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের রাস্তার পাশে থাকা সুপারি বাগানে পরে থাকা ছেঁড়া বিদ্যুতের তারে জড়ালে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নাজিরপুর থানার কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ আল ফরিদ ভূইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত হরিদাসী হালদার নাজিরপুর উপজেলার ৬নং নাজিরপুর ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের সুখরঞ্জন হালদারের স্ত্রী।
মৃত হরিদাসী হালদারের ছেলে রিপন হালদার জানান, বিকাল ৪টার দিকে বাড়ির পাশে খালে গোসল করার জন্য তাদের সুপারি বাগানের ভিতর দিয়ে রাস্তায় উঠার সময় সাত- আট দিন আগেই পল্লী বিদ্যুতের তার ছেঁড়া ছিল সেই ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তারে তার কানের পাশে জড়িয়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ৭-৮ দিন আগেই পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছিল এবং আমারা এ বিষয়টি অভিযোগ নাম্বারে কয়েকবার জানানোর পরেও তারা না আসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন তদন্তে জানা যায়, উক্ত অভিযোগ কেন্দ্র দায়িত্বে থাকা ইলেক্টিশিয়ান লিটন তিনি গাফিলতি করে এ সার্ভিস তার ঠিক করার উদ্যোগ নেননি, তারই অবহেলায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, সংযোগ বিছিন্ন হলে স্থানীয় তাপসের মাধ্যমে অফিসে জানালে ও কোনো সুরাহ পাইনি। হরিদাসীর মৃত্যুর পর তরিগড়ি করে সংযোগ দিয়ে সটকে পড়েন অফিসের লোকজন। স্থানীয়দের অভিযোগ টাকা না দিলে অফিসের লোকজন কাজ করে না।
হরিদাসী হালদারকে বাঁচাতে তার নাতি অনিক হালদার এগিয়ে এলে সে সামান্য আহত হয়। পরে এলাকাবাসী হরিদাসী হালদারকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাজিরপুর থানার কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ আল ফরিদ ভূঁইয়া বলেন খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নাজিরপুর পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মচারী বলেন, এই মৃত্যুর দ্বায়ভার আমাদের অফিসের এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে অফিস মৃত্যুর পরিবারের সঙ্গে একটা সমজতা করবে আমার ধারনা।
এদিকে নাজিরপুর পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম কামরুজ্জামান, ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি আমরা জানি না এ বিষয়ে কিছু।
অপরদিকে নাজিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রাসেল সিকদার বলেন, গতকাল রাতে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন তাদের ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূণর দেওয়ার জন্য জোড় করছে। অবহেলায় একটা মৃত্যু এর মূল্য ১০ হাজার টাকা, এভাবে যদি পার পেয়ে যায়, তাহলে এই হরিদাসীর মত আরো মানুষের জীবন দিতে হবে। আমি চাই এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ অবহেলায় মারা না যায়।
এদিকে নাজিরপুর পল্লী বিদ্যুতের গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত অভিযোগ স্থানীয়দের। এদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ভবিষৎতে এমনটি হবে না এবং সব সময় তারা সতর্ক থাকবে।
ভোরের আকাশ/জাআ