বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ০২:৪৬ পিএম
বসবাসের অনুপযোগী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা
প্রমত্তা বিষখালী নদীর মাঝে জেগে ওঠা বিশাল আয়তনের একটি চর হলো ‘মাঝের চর’। এ চরের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা মাছ ধরা ও কৃষিকাজ। চরটির পূর্ব পাশে বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে পাথরঘাটা উপজেলার কাঁকচিড়া ইউনিয়ন।
ভূমিহীন ও দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এই চরে ঘর নির্মাণ করা হয়। এসব ঘর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বর্তমানে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘরের চালার টিন মরিচা ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে, দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। অনেক বাসিন্দা বাধ্য হয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ফাঁকা পড়ে থাকা ঘরগুলোর কয়েটি এখন গোয়ালঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘর বরাদ্দের পর দীর্ঘ ২২ বছরেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি সরকারের সংশিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ।
বরগুনা সদর উপজেলায় ১২টি এবং পাথরঘাটা উপজেলায় ৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। প্রায় সব প্রকল্পই নদী, চর ও খালপাড়ে স্থাপিত। প্রতিটি ঘরের টিনের চালা নষ্ট, পলিথিন দিয়ে ঢেকে বৃষ্টির পানি ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী ও নোংরা, পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রবেশপথের অবস্থাও নাজুক।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণের ঘরের চালা টিনে মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে, ভেতরে পানি পড়ে। পিলারের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে। বরগুনা সদরের মাঝেরচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩০টি পরিবারের জন্য একটি মাত্র পুকুর রয়েছে, যা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। নিরাপদ পানির জন্য চারটি নলকূপ থাকলেও একটি মাত্র সচল রয়েছে।
সদরের বাসিন্দা পারভীন বেগম বলেন, ‘আশ্রয়ণের ঘরগুলোতে আর থাকার অবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে আগে আমাদের ঘরের ভেতরে পড়ে, তারপর বাইরে। চালার টিন ছিদ্র হয়ে গেছে, দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। নিরাপদ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা যেন প্রাচীন আমলের মতো বাস করছি।’
অপর এক বাসিন্দা মো. নাসির বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ঘরে থাকা যায় না। চালার টিন ছিদ্র হয়ে গেছে, পলিথিন দিয়েও ঢেকে রাখা যায় না। সরকার এই ঘরগুলোর খোঁজ নেয় না।’
মো. ছগীর হোসেন বলেন, ‘জেলে মানুষ আমি, সাগরে মাছ ধরে খাই। থাকার আর কোনো উপায় নাই বলে এই জরাজীর্ণ ঘরে বাস করছি। সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় বন্যার সময় আমাদের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পাথরঘাটার শেল্টারে আশ্রয় নিতে হয়।’
পাথরঘাটার কাঁকচিড়া ইউনিয়নের মাঝেরচরে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছয়টি ব্যারাকে ৬০টি ঘর থাকলেও বর্তমানে মাত্র তিনটি পরিবার বসবাস করছে। বাকি পরিবারগুলো ঘরের করুণ অবস্থার কারণে অন্যত্র চলে গেছে। ফাঁকা ঘরগুলো এখন গরু-ছাগল রাখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সেখানে বসবাসকারী ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘দুই বছরের মধ্যেই ঘরগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। এখন বৃষ্টি হলে ঘরে দাড়ানোর জায়গা থাকে না।’
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউর আলম বলেন, তাদেরকে (বাসিন্দাদের) সরকার জমি ও ঘর দিয়েছে। এই ঘরগুলো তাদেরই রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। ঘর সংস্কারের জন্য সরকারের কোনো প্রকল্প নেই। যদি কোনো বরাদ্দ আসে, তবে ঘর সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করা হবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা