সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৫ ০১:০২ পিএম
যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙনও তীব্র হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী এলাকা।
যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু হওয়ায় সিরাজগঞ্জে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। বিলীন হচ্ছে বিঘার পর বিঘা ফসলি জমি। জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলেও আটকানো যাচ্ছে না নদীর ভাঙন।
বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই অশান্ত হয়ে পড়েছে যমুনা নদী। গত তিন সপ্তাহ ধরে তলীয়ে যাচ্ছে সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী সহ আশপাশের গ্রামের ফসলী জমি, রাস্তা ঘাট ও গাছপালা। নদী ভাঙনে পৌছে গেছে পশ্চিম পাড়ের ঘর-বাড়ি পর্যন্ত।
স্থানীয়রা বলছেন, নদীর পূর্ব দিকে চর জেগে ওঠায় স্রোতে আঘাত হানছে পশ্চিম পাড়ে। এপাড়ের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে দুঃশ্চিন্তায় পরেছেন ভাঙ্গনকবলিত নদীর পশ্চিম পাড়ের মানুষ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভাঙনরোধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্ষা মৌসুমের আগেই আকস্মিকভাবে ভাঙছে যমুনা নদী। গত ১৬ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত যমুনা নদীতে ১৩৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে পানি বাড়লে বিপদসীমার ২৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী ভাটপিয়ারীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাটপিয়ারী গ্রামে যমুনা নদীর পূর্বদিকে চর জেগে উঠায় নদীর ক্যানেল সৃষ্টি হয়ে পানির স্রোতে আঘাত হানছে পশ্চিম পাড়ে। ফলে নদীর পশ্চিম পাড়ের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙছে নদীর তীর। গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে এসব এলাকার কয়েক শত বিঘা ফসলী জমি, রাস্তা ঘাট, গাছপালা।
অব্যাহত এই ভাঙনে ইতিমধ্যে নদী এখন পশ্চিম তীর রক্ষা বাঁধের কাছে এসে পড়েছে। ভাঙন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটছে নদী পাড়ের মানুষের। ভাঙন অব্যাহত থাকলে হুমকির মুখে পড়বে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কয়েকশ ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ ফসলি জমি। ফলে দুশ্চিন্তায় নদী পাড়ের মানুষ। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে ফসলী জমি ও বিভিন্ন স্থাপনাসহ ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। ভাঙন অব্যাহত থাকলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে হুমকীর মুখে পড়বে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বাঁধের অভ্যন্তরে থাকা ভাটপিয়ারী, শিমলা, পাঁচঠাকুরী সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।
ভাটপিয়ারী নদী ভাঙন কবলিত এলাকার স্থানীয় শেখ মো: এনামুল হক ভোরের আকাশকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার কারনে বর্ষা মৌসুমের আগেই নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার ভাটপিয়ারি, পাঁচঠাকুরি, শিমলা গ্রাম নদীর ভিতরে ছিলো। কিন্তু যমুনার ভাঙনে সব শেষ। এবছরের শুরুতে ভাঙন শুরু হয়। বিষয়টি আমরা বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে আমরা এলাকাবাসী মানববন্ধন করি। কিন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতির কারনে ভাঙন বেড়েছে। তখন যদি ভাঙন রোধে কাজ করতো তাহলে বাড়িঘর, ফসলি জমি রক্ষা পেতো। ভাঙনের কারনে এলাকার মানুষ নিশ্ব হয়ে পড়ছে। তাই আমি অন্তবর্তি সরকারের নিকট দাবি করছি ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
স্থানীয় শহীদুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ হওয়ার পরে বাঁধ অভ্যান্তরে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল চর জেগে ওঠে। এসব চরে কৃষকরা আখ, গম, কলাই, সরিষা, বাদাম, ধান সহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হতো। এখানকার উৎপাদিত ফসল দিয়ে শত শত মানুষের জীবীকা হতো। হঠাৎ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে ভাঙন শুরু হয়। পুরো চর ভেঙে শেষ। ভাঙন এখন নতীর তীর রক্ষা বাঁধের কাছে এসে পৌঁছেছে। কৃষকরা ফসলী জমি হারিয়ে এখন নিশ্ব। দ্রুত ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন না করলে পুরো এলাকা নদী গিলে ফেলবে।
সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমীর হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, নদীতে চর জেগে ওঠায় কৃষকরা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছিলো। কিন্তু গত তিন সপ্তাহের নদী ভাঙনের কারনে কৃষকের ফসল সহ জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের কারনে স্কুল-মাদ্রসা, দোকানপাট, হাট-বাজার হুমকীর মুখে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন অফিসে বার বার গেছি কোন কাজ হয় নাই। কিছু বস্তা ফেলে আবার চলে যায়। গ্রাম টিকিয়ে রাখতে হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মান জরুরি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। গত ১৬ মে ৩৩ সেন্টিমিটার, ১৭ মে ২০ সেন্টিমিটার, ১৮ মে ৪ সেন্টিমিটার, ১৯ মে ৭ সেন্টিমিটার, ২০ মে ২৫ সেন্টিমিটার, ২১ মে ৬৮ সেন্টিমিটার, ২২ মে ৩৬ সেন্টিমিটার, ২৩ মে ১৬ সেন্টিমিটার, ২৪ মে ৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। গত ১৬ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত যমুনা নদীতে ১৫৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে পানি বাড়লে বিপদসীমার ২৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, ভাঙন রোধে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। এই অসমেয় নদী ভাঙনের মূল কারণ হচ্ছে ভাপটিয়ারি এলাকায় নদীর পূর্বদিকে চর জেগে উঠায় পানি পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা ভাঙন এলাকায় পর্যবেক্ষনে রেখেছি। প্রতি সপ্তাহে মনিটরিং করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় নদীর তীর শক্তিশালী করার জন্য আমরা একটি চাহিদা প্রেরণ করেছি। অর্থ বরাদ্দ পেলেই বর্ষার আগেই কাজ শেষ করে ফেলবো। আতংকিত হওয়ার কিছু নাই, আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ভোরের আকাশ/আজাসা