পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ০৭:০০ পিএম
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তপরিবার।
পিরোজপুর সদর উপজেলার শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডুমুরিতলা গ্রামের দিনমজুর মো. আমজেদ শেখ (৪০)। স্ত্রী হিমা বেগম (২৭) কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনরকমে সংসারের চাকা সামান্য চালাতে পারলেও এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সেই সামান্যটুকুও কেড়ে নিয়েছে। পরিবারটির ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মাথা গোজার ঘর আর সহায়-সম্বল হারিয়ে অসহায় পরিবারটি এখন এক কাপড়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে সদর উপজেলার শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডুমুরিতলা গ্রামে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে নিঃস্ব হয়ে গেছে পুরো পরিবার।
রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আগুন সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, নেই একটি থালাও। বুকভরা হাহাকার, চোখভরা কান্না আর খোলা আকাশের নিচে দিন গুনছে পিরোজপুর সদর উপজেলার শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডুমুরিতলা গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারটি। আগুনে পুরোপুরি পুড়ে গেছে অসহায় দিনমজুর আমজাদ শেখের টিনের ঘরটি। ঘরে থাকা চাল, আসবাবপত্র, নগদ টাকা, গৃহপালিত ছাগল পুড়ে পথে বসে গেছে পরিবারটি।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. জসিম বলেন, বাড়িতে আগুন দেখে আমরা ছুটে আসি। তবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও পারিনি। আগুনের তাপের কারণে আমরা কাছে যেতে পারেনি। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারনে আগুন লাগছে ঘরের টিন কারেন্ট হয়ে ছিল। এতে পরিবারটির ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘর থেকে কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘরে থাকা চাল, ডাল, খাতা-কলম, টাকা-পয়সা সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরিবারটি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রম্ত মো. আমজেদ শেখ বলেন, ঘরে বৈদ্যুতিক তার থেকে আগুন লেগেছে। এতে ঘরের আসবাবপত্র, নগদ টাকা-পয়সা সব পুড়ে গেছে। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। পরনের লুঙ্গি ছাড়া সবকিছু পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস আসছিল কিন্তু রাস্তা না থাকায় গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারে নাই। আমার সব পুড়ে গেছে।
আমজেদ শেখের স্ত্রী হিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুন দেখে বাড়িতে ছুটে এসে দেখি সব পুড়ে গেছে। থাকার মতো কোনো উপায় নেই। আমরা খুব গরিব-অসহায়। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার ৮ মন চাল, নগদ ৩০ হাজার টাকা, ঘরের মধ্যে থাকা একটি ছাগল সব পুড়ে গেছে। আমাদের এখন কি হবে!
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার একটা সেলাই মেশিন ছিল। মানুষের বাড়িতে কাজ করার পাশাপাশি সেই মেশিন দিয়ে কিছু কাপড়ও সেলাই করে আয় করতাম। আমার আয়ের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে।
পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর যুগল বিশ্বাস বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে আমাদের টিম আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনা স্থলে যাই তবে রাস্তা না থাকার কারনে গাড়ি নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারিনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
এ বিষয়ে পিরোজপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি আমাদের কাছে এসেছিলেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা সহায়তা করেছি। পাশাপাশি আগামীতে তাদের সমস্যায় সহায়তা করা হবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা