ভোলা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫ ০৪:১০ পিএম
গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী, স্যালাইন সংকটে ভোগান্তি
তীব্র গরমে ভোলার চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে ডায়রিয়া কলেরা রোগীর সংখ্যা। এতে শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে আক্রান্তের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। এদিকে হাসপাতালে স্যালাইন সংকটের কারণে রোগীরা হাসপাতালের বাহির থেকে খাবার স্যালাইন এবং (কলেরা) স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১ মে থেকে বুধবার ১৪ মে পর্যন্ত ১৪ দিনে শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধসহ ১৬৩ জন রোগী ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
বুধবার সকালে ভর্তি হয়ে ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি রয়েছে। দুপুরে চরফ্যাসন উপজেলা ১০০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় , উপজেলার ২১ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অহিদ তার ৪ বছর বয়সের তামিন নামে শিশু বাচ্চার পাতলা পায়খানা হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি জানান, স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়েছি অবস্থা অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার সকালে আমার শিশু বাচ্চাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। এখনও তার ছেলেকে নার্সেরা দেখতে আসেনি।
উপজেলার নীলকমল ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফারজানা বেগম জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তার ১ বছর বয়সী শিশু বাচ্চাকে বুধবার সকালে ভর্তি করেন। এরপর নার্সদের পরামর্শে হাসপাতালের বাহির থেকে স্যালাইন সেট, ক্যানেলা ও কলেরা স্যালাইন এবং খাবার কিনে আনতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে কিছুই দেওয়া হয় নাই। সরকারী হাসপাতাল হলেও সরকারী কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, তীব্র গরমে ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগীদের প্রয়োজনে হাসপাতালে চিকিৎসক তো দূরের কথা, কোনো নার্সকেও তারা ডেকে পান না। হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধও সরবরাহ করা হয় না। নার্সরা স্লিপ ধরিয়ে দেন, তা দেখে বাইরে থেকে ওষুধ, স্যালাইন, ক্যানুলাসহ যাবতীয় সামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে। নামেই শুধু সরকারি হাসপাতাল। সবই কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। হাসপাতালে খাবার স্যালাইন থাকা সত্বেও রোগীদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতালের নার্স ইনচার্জ অপরাজিতা জানান, রোগীরা নার্সদের ডাকলে নার্সরা আসেনা এই কথাটা সম্পূন্ন মিথ্যা কথা, রোগীদের সেবায় ১৭ জন নার্স সর্বদা নিয়জিত রয়েছেন। ডায়রিয়া রোগীদের খাবার স্যালাইন,ও কলেরা স্যালাইন হাসপাতালে নাই বলে বাহির থেকে আনার জন্য স্লিপ ধরিয়ে দেন এ বিষয় প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, গত ১৪ দিনে চরফ্যাসন হাসপাতালে ১৬৩ জন ডায়রিয়া ( কলেরা) আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্যালাইন সেট, বাচ্চাদের ক্যানেলা, কলেরা স্যালাইন, এ্যান্টিভাইটিক, মাইক্র বুলেট, জিং সিরাপ না থাকায় ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দানে কিছুটা বিঘœ হচ্ছে । তাই রোগীদেরকে বাহির থেকে আনতে বলা হয়। যার ফলে রোগীরা এই অভিযোগগুলো তুলছে।
চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শোভন বশাককে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি। তবে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাকলুকুর রহমান জানান, জনবল সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সীমিত সংখ্যাক কলেরা স্যালাইন সরবরাহ পাওয়ায় কোনো রকমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে রোগীদের বাহির থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে । তিনি জানান, ইতিমধ্যে জেলা সিভিলা সার্জন বরাবর ডায়রিয়া রোগীদের স্যালাইন সহ বিভিন্ন ওধুদের চাহিদা পাঠানো হয়েছে আশকরি এর দ্রুত সমাধান হবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা