ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫ ০৩:৫০ পিএম
শ্রীপুরে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
গাজীপুরের শ্রীপুরে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার ভোরে শ্রীপুর পৌরসভার জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
প্রসূতি মিথিলা আক্তার (২৪) শ্রীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।জয়েদা মাল্টিকেয়ার নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে এরকম বহু অভিযোগ উঠলেও প্রতিকার হয়নি।
প্রসূতি মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন। দায়িত্ব অবহেলা ও ভুয়া নার্স থাকার সত্যতা পেয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালের সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
ভুক্তভোগী নবজাতকের চাচা আশিকুর রহমান বলেন, গত ২২ তারিখে ছোট ভাইয়ের বউকে স্থানীয় জায়েদা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে ঐদিন রাতেই সিজারিয়ান অপারেশন করেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শারমিন আক্তার লিজা। অপারেশনের পরপরই তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ঘন্টা খানেক পর শিশুর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে আমরা হাসপাতাল কতৃপক্ষকে অবহিত করি। কিন্তু সেসময় কোন চিকিৎসক ছিলো না। এমনকি কোন নার্সেরও দেখা মেলেনি। এরপর আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের গুরুত্ব দেয়নি।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাদেরকে বলেন, বাচ্চা সুস্থ আছে কোন সমস্যা হবে না। নবজাতকের অবস্থা আরও অবনতি হলে আমরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা জানান দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে। পূনরায় নবজাতককে নিয়ে জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর অনুরোধ করি। কিন্তু ওরা কোন কর্নপাত করেনি। অক্সিজেন দিয়ে আমাদের পরামর্শ দেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে।
আশিক অভিযোগ করে বলেন হাসপাতালেই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছিলো কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দায় এড়াতে আমাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এটিও একটি বড় প্রতারণা। নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেয়ে নবজাতকের মায়ের অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। প্রসূতি মায়ের অবস্থাও সংকটাপন্ন। তিনি আরও জানান, এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফলতিতে অভিযোগে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বিষয়টি সঠিক নয়। আমাদের একটা অপরাধ আছে তা হলো সিজারিয়ান অপারেশনের পর কোন চিকিৎসক নার্স ছিলো না। নবজাতকের জন্মের পরপরই নবজাতক ও মা সুস্থ ছিলো। একদিন পর নবজাতক মারা গেছে। তাদের আস্থা না থাকায় প্রসূতি মাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি ভোররাতেই জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে কোন চিকিৎসক বা নার্স পাইনি। যাঁদেরকে নার্স বলা হচ্ছে তাদের কোন প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা নেই। বাড়ির কাজের লোকদের এপ্রোন পরিয়ে নার্স সাজিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি দ্রুত সময়ের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। তিনি আরও জানান, সিভিল সার্জনের নির্দেশনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/আজাসা