ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০২:২৯ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন কেটে পাশ্ববর্তী ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা ও সালথার সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাঙ্গা।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় তৃতীয় দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচিতে নামে স্থানীয় জনগণ।
বাজার ও মহাসড়কে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ভাঙ্গা বাজার দক্ষিণপাড় বাসস্ট্যান্ডে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা একত্রিত হয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখে উত্তেজিত জনতা হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ সদস্যরা আশ্রয় নেন স্থানীয় ঈদগাঁ মাদ্রাসা মসজিদে।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন বিক্ষোভকারীরা ভাঙ্গা থানা ঘেরাও করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে ঘণ্টাব্যাপী।
ঐক্য কমিটির নেতাসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এর আগে আন্দোলনের মূল আহ্বায়ক ও ভাঙ্গা উপজেলার সর্বদলীয় ঐক্য কমিটির প্রধান সমন্বয়ক, আলগী ইউপি চেয়ারম্যান ম.ম. ছিদ্দিক মিয়া, হামিরদী ইউপি চেয়ারম্যান মো. খোকন মিয়াসহ মোট ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ভাঙ্গা থানার এসআই মো. হাবিবুর রহমান।
ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন রোববার রাত ১১টার দিকে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জাহাঙ্গীর বেপারি, তৌহিদুর রহমান বুলবুল, শেখ আরাফাত, ইমরান মুন্সীসহ অনেকে।
"নিরপরাধরাও মামলার আসামি"— অভিযোগ ঐক্য কমিটির
আন্দোলন সংশ্লিষ্টদের দাবি, মামলায় শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরই নয়, নীরিহ সাধারণ মানুষকেও আসামি করা হয়েছে। তারা বলেন, মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের নেতারাই এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত। প্রশাসন রাজনৈতিক হয়রানির অংশ হিসেবে আওয়ামীপন্থী নেতাকর্মীদের টার্গেট করছে।
রাজনৈতিক একাত্মতা ও অবরোধ অব্যাহত
৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনের পর থেকেই ইউনিয়ন দুটি ভাঙ্গার সাথে পুনঃসংযুক্ত করার দাবিতে শুরু হয় ধারাবাহিক আন্দোলন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন, এনসিপি ও গণ-অধিকার পরিষদ রাজপথে একাত্মতা প্রকাশ করে। এতে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিনিধিদেরও অংশগ্রহণ দেখা যায়।
শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিও পালিত
সোমবার সকালে হামিরদী বাসস্ট্যান্ডে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নারী-পুরুষ একত্র হয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তারা বলেন, “আমরা সংঘর্ষ চাই না। আমাদের দাবি একটাই—আমাদের ইউনিয়ন ফেরত চাই।”
পরে বিভিন্ন ইউনিয়নের জনগণ ভাঙ্গা বাজারে এসে মিলিত হন এবং আবারও সড়ক অবরোধ করেন।
বর্তমানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলেও আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি মানা না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণায় বাধ্য হবেন। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নজরদারি ও প্রস্তুতি জোরদার করেছে।
ভোরের আকাশ/তা.কা