নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৫ ০২:৩৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিত্যপণ্যের বাজারে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পেয়াজ, ডিম, মাংস, মাছ ও সবজির বাজারে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ক্রেতাদের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে।
একদিকে আয় অপরিবর্তিত, অন্যদিকে প্রতিদিন নতুন করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম— এই অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মাসের বাজেট সামলানো যেন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দামও। আগে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। মাত্র একমাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
এছাড়া পেঁয়াজের আমদানি বাড়লে দাম কমেনি খুচরা বাজারে। দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, প্রোটিনের সবচেয়ে সহজলভ্য উৎস ডিম এখন আর সাশ্রয়ী নেই। পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কম হলেও খুচরা বাজারে সেই দাম পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ বেড়ে যাচ্ছে। এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, আমরা পাইকারি থেকে ৬৮-৭০ টাকায় কিনছি, কিন্তু পরিবহন, ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ হয়ে খুচরায় ৭৫-৮০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হয় না।
ব্রয়লার মুরগির দামও ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৮০–১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত মাসে ছিল ১৩০–১৪০ টাকা। লাল মুরগি মানভেদে দাম আরও বেশি ৩৮০–৪০০ টাকা প্রতি কেজি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফিডের দাম বাড়ায় এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ছে।
দ্রব্যমূল্য বেশি ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে সবজির বাজারে। ক্রমাগত বৃষ্টিপাত ও অধিকাংশ সবজির মৌসুম শেষ হওয়ায় বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারে দাম লাফিয়ে উঠেছে।
রাজধানীর গাবতলী, কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৮০–৯০ টাকা; পটল, ঢেঁড়স, করলা ৭০–৮৫ টাকা; টমেটো ২০০-২২০ টাকা, সিম ২৪০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া শসা ৮০–৯০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৮০–২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে আলু। যা কয়ক মাস ধরে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে রয়েছে।
এ ছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, আদা ইত্যাদির দামও বেড়েছে। পেঁয়াজ ৭৫–৮০ টাকা, আদা ২৪০–২৬০ টাকা এবং রসুন ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারও ক্রেতাদের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। ছোট মাছের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। পুঁটি, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া ইত্যাদি জনপ্রিয় মাছের দাম ২৫–৪০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ২৮০–৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রুই, কাতল, কালি, পাবদা, কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের এই লাগামহীন দামে ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল হোসেন বলেন, আগে ৫০০ টাকায় সপ্তাহের কাঁচাবাজার হতো, এখন ১০০০ টাকাতেও সবকিছু হয় না। ডিম, মাংস, সবজি— কোনোটারই দাম কম নেই। পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
অন্যদিকে গৃহিণী রাবেয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন নতুন করে দাম বাড়ছে। সরকার শুধু তদারকির কথা বলে, কিন্তু বাজারে কোনো প্রভাব পড়ছে না।
ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। টানা বৃষ্টি, মৌসুম শেষের দিকে হওয়ার কারণে খরচ বেড়েছে।
মামুন নামের এক দোকানদার বলেন, আমরা নিজেরা লাভ বাড়াইনি। বাজারে সরবরাহই কম, ফলে দাম বাড়ছে। বৃষ্টির কারণে পরিবহন খরচও অনেক বেড়েছে।
ভোক্তা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বাজার মনিটরিং দুর্বল এবং মৌসুমি কারণে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর এক গবেষকের মতে, সরকারকে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে, আমদানি সহজ করতে হবে এবং নিয়মিত বাজার মনিটরিং চালু রাখতে হবে। না হলে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি আবহাওয়া অনুকূলে না থাকে তবে আগামি কয়েক সপ্তাহে দাম আরও বাড়তে পারে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রোটিন তো দূরের কথা, ভাতের সঙ্গে তরকারি খাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.