× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আ.লীগ থেকে কী শিক্ষা নেবে অন্য দলগুলো?

মো. মনিরুজ্জামান মনির

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৫ ১১:১০ পিএম

আ.লীগ থেকে কী শিক্ষা নেবে অন্য দলগুলো?

আ.লীগ থেকে কী শিক্ষা নেবে অন্য দলগুলো?

যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকেন, তাদের মধ্যে একটা অহমিকা অটোমেটিক্যালি তৈরি হয়ে যায়। তখন তারা আর জনগণের ভাষা বুঝতে পারেন না কিংবা বুঝতে চান না। তারা ব্যক্তি স্বার্থে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা অনেক কিছুই জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে জনগণের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। এই দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একটা সময় তারা সরকারের ওপর বিরক্ত হয়ে যান; ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নামেন। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্দোলন বৃহৎ আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকারবিরোধী গোষ্ঠী এবং দেশপ্রেমিক জনগণও এই আন্দোলনে যোগ দেন। একটা সময় সরকারের পতন হয়Ñ এটাই গণতান্ত্রিক দেশের স্বাভাবিক চরিত্র। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম না।
এদেশে আন্দোলন সংগ্রামে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি তরুণ ও ছাত্র সমাজই সব চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, রাখছে, রাখবে। তারাই জনগণকে বারবার জাগিয়ে তুলেছে। পুলিশের বন্দুকের সামনে তারাই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে বারবার। ’৫২, ৬৯ ও ৭১-এর পর ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল মূলত ছাত্রসমাজ। দীর্ঘ সময় পর ২০২৪ সালে আরেকটি অভ্যুত্থান দেখল বাংলাদেশ। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের মতো একটা বড় ও প্রাচীন দলের প্রধানকে যখন দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়; তখন তার ও দলের ভুল নিয়ে চলে নানা বিশ্লেষণ। এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে পারে তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা-দীক্ষার জন্য। তারা যেন এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন।
শেখ হাসিনার সব চেয়ে বড় ভুল হলো পরিবারতন্ত্র। বিভিন্ন পদে তিনি আত্মীয়-স্বজনকে বসিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে তারা তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এই পরিবারতন্ত্রের কারণে ক্ষতি হয়েছে দলের। ত্যাগী-নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাদের অনেককে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। অনেকে রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
উদাহরণটা শুরু করতে চাই কুমিল্লা থেকে। এই নগরের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি ছিলেন আ ক ম বাহারউদ্দিন। কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে তার মেয়ে তাহসিনা সূচনা বাহার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং ভোটে জিতেও যান। খুলনার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। এর আগে তিনি বাগেরহাটের এমপি, প্রতিমন্ত্রী এবং এরও আগে খুলনা সিটির মেয়র ছিলেন। একাদশ সংসদে তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার বাগেরহাট-৩ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। পরে তিনি বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির অন্যতম জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন সাঈদ খোকন। তার বাবা মোহাম্মদ হানিফও অত্যন্ত জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন। এই সাঈদ খোকনকে বাদ দিয়ে রাজনীতিতে হঠাৎ আবির্ভাব হওয়া ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ মনির ছেলে। তাপসের আরেক ভাই শেখ ফজলে শামস পরশকে সপ্তম কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান করা হয়। এখানে লক্ষণীয় যে তাপস ও পরশ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। কেবল শেখ পরিবারের সদস্য হওয়ায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে তাদের চেয়ারে বসানো হয়েছে। গত সংসদে ঢাকায় যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন; তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাহাউদ্দিন নাছিম। মাদারীপুরের এই ভদ্রলোককে ঢাকায় কেন মনোনয়ন দিতে হলো? ঢাকার স্থানীয় এমন কোনও নেতা নেই; যাকে মনোনয়ন দেওয়া যায়? স্থানীয়দের মনোনয়ন না দেওয়ায় হয়তো শেখ হাসিনার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি; কিন্তু নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশ কয়েক বছর অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। ঢাকায় এতো নেতাকর্মী থাকতে চাঁদপুরের এই লোককে কেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দিতে হলো? ঢাকার পাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা হলো নারায়ণঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি এবং পরে মন্ত্রী হন গোলাম দস্তগীর গাজী। তার স্ত্রী হাসিনা গাজী তারাব পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের টিকিটে। ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে টানা তিনবার এমপি এবং পরে মন্ত্রী হন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার আপন ছোট ভাই এহতেশাম বাবর ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের টিকিটে। সারাদেশে একই অবস্থা ছিল। বাবা এমপি, ছেলে উপজেলার চেয়ারম্যান কিংবা পৌর মেয়র। স্বামী এমপি আবার স্ত্রী মেয়র কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান। কখনো কখনো এই দায়িত্বে বসানো হয়েছে এমপি-মন্ত্রীর নিকট আত্মীয়কে। এ কারণে টানা সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগে কিছু সুবিধাভোগী তৈরি হয়েছে। নতুন নেতা কিংবা ত্যাগী কর্মী তৈরি হয়নি। ফলে রাজপথে লড়াই করার মতো নেতাকর্মী দলটিতে ছিল না। এছাড়া অনেক নেতার নির্যাতনে অনেক নেতাকর্মীও গোপনে দলের বিরোধিতা করেছেন। 
বিতর্কিত বক্তব্য : গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান হবে। সাংবাদিকের এক প্রশ্নে তিনি তেলে-বেগুনে জ¦লে ওঠেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা (কোটা) পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? তার এই বিতর্কিত বক্তব্য শুধু তার জন্য নয়, দেশ ও জাতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই ১৪ জুলাই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সেøাগান ওঠে, ‘আমি কে? তুমি কে? রাজাকার রাজাকার’। পরে তা বদলে হয় ‘চেয়েছিলাম অধিকার/ হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমি কে? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার/ কে বলেছে? কে বলেছে? সরকার, সরকার’। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের বদলে ‘স্বৈরাচার’ শব্দটিও শোনা গেছে। এরপর এই আন্দোলন আর দমানো যায়নি। সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা রাজধানীর সব সড়ক অবরোধ করে প্রতিদিনই আন্দোলন করেন। আন্দোলন পরবর্তীতে এমনভাবে বৃদ্ধি পায় যা আর কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে গত ৪ জুলাই কোটা ইস্যুতে আদালত যখন শুনানি আরও এক মাস পেছান তখন ছাত্রদের আন্দোলন আরও তীব্রতর হতে থাকে। অবশেষে ৬ জুলাই কোটাবিরোধীরা সারা দেশে ‘বাংলা বন্ধের’ ডাক দেন। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, পরীক্ষা বর্জন ও সাধারণ ছাত্র ধর্মঘটের আহ্বান জানান। গত ১১ জুলাই ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে যে শক্তি প্রদর্শন করছেন, তা বেআইনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন। সারা দেশব্যাপী জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোটা আন্দোলন করতে দেওয়া প্রশাসনিক দুর্বলতা কি নাÑ এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়, আমরা ধৈর্য ধরছি। ধৈর্য ধরা মানে দুর্বলতা নয়। সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেওয়া হবে। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার জবাব ছাত্রলীগই দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে, তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পরই ১৬ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে প্রথমে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে দফায় দফায় ক্যাম্পাসজুড়ে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী একজোট হয়ে ফের আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোটা হাতে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর দখলে চলে যায় ক্যাম্পাস। সংঘর্ষের সময় কয়েকজন যুবককে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা গেছে। সন্ধ্যায় বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সেখানে পুলিশ প্রবেশ করে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর মধ্যরাতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে পুলিশ।
এভাবে আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অ্যাকশনে যায়। তাদের গুলিতে দেড় হাজারের মতো মানুষ নিহত হন। আহত হন আরও অনেক মানুষ। তাদের সিংহভাই ছাত্র-তরুণ। এক পর্যায়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান বলে খবর আসে। এরপর সারাদেশে তাণ্ডব চালানো হয়। থানায় থানায় আক্রমণ করা হয়। অনেক পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এবং তাদের সম্পদ হামলার শিকার হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই পরিবারতন্ত্র, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং অহমিকায় পতন থেকে অন্যদলগুলো শিক্ষা নিকÑ এটাই প্রত্যাশা। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।   
 

ভোরের আকাশ/মি

  • শেয়ার করুন-
 শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

সংশ্লিষ্ট

বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে রংপুর এগিয়ে থাকবে

বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে রংপুর এগিয়ে থাকবে

ট্রাম্প কেন মার খেলেন?

ট্রাম্প কেন মার খেলেন?

ইরানের ‘ফ্রেন্ডলি’ প্রতিশোধ এবং তিন পক্ষের বিজয়!

ইরানের ‘ফ্রেন্ডলি’ প্রতিশোধ এবং তিন পক্ষের বিজয়!

লন্ডন বৈঠকে দায় বাড়ল বিএনপি’র

লন্ডন বৈঠকে দায় বাড়ল বিএনপি’র