ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৫ ১১:৩৯ এএম
শিলিগুড়ি করিডরে রাফাল জেট এবং এস-৪০০ মোতায়েন করল ভারত
ভারতের পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর শিলিগুড়ি করিডর (চিকেন নেক) ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে আলোচনা। ২০-২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এই করিডরটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে একমাত্র স্থল যোগাযোগব্যবস্থা এবং এটি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং চীনের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই করিডরে ভারতের সামরিক তৎপরতা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে গেছে। তারই অংশ হিসেবে শিলিগুড়ি করিডরে এবার রাফাল যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়ার তৈরি ঝ-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করল ভারত।
পাকিস্তান ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছে, নয়াদিল্লি এখন তার কৌশলগত দৃষ্টি পূর্ব দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে এবং লাল রেখা টানতে শুরু করেছে। পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়ে এলেও ভারতের দৃষ্টি এখন বেইজিং এবং ঢাকার দিকে।
দ্য এশিয়া লাইভের মতে, ভারত-ভুটান সীমান্তের কাছে সাম্প্রতিক চীনা সামরিক মহড়া এবং বাংলাদেশে দ্রুত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে নয়াদিল্লি সজাগ রয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ঢাকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চীন ও পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বলে জানা গেছে- যা ভারতের পূর্বে কৌশলগত ভারসাম্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত তার আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে মানববিহীন বিমান চলাচল (UAV) নিষেধাজ্ঞা কঠোর করেছে এবং সমগ্র পূর্ব সীমান্তজুড়ে আকাশপথে নজরদারি জোরদার করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ৩২টি চীন-পাকিস্তান যৌথভাবে তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে বলে যে খবর সামনে এসেছে, তাতে ভারতের উদ্বেগ আরো বেড়েছে। এই জেটগুলো এইএসএ রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার পড এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত। উত্তর বাংলাদেশে এসব জেট মোতায়েন করা হলে তা ভারতীয় সীমান্ত ও বিমান ঘাঁটির জন্য হুমকি হতে পারে।
আরো উদ্বেগজনকভাবে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছে। সফরটি উগ্রবাদবিরোধী সহযোগিতা ও গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি সংক্রান্ত আলোচনার উদ্দেশ্যে হলেও এতে ভারত অস্বস্তি প্রকাশ করেছে। সফরের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল শহীদ আমির আসফার।
এই ভূ-রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিক্রিয়া কেবল প্রতিরক্ষা জোরদার নয়, বরং কৌশলগতভাবে বার্তা দেয়ার একটি উপায়। হাশিমারা বিমান ঘাঁটিতে রাফাল জেট স্কোয়াড্রনের পাশাপাশি ৪০০ কিমি দূরপাল্লার হুমকি মোকাবিলার সক্ষমতা সম্পন্ন এস-৪০০ মোতায়েন একটি কৌশলগত সতর্কতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের সামরিক বাহিনী বর্তমানে একটি বহু-জোন প্রতিরোধমূলক মতবাদ অনুসরণ করছে, যার মধ্যে রিয়েল-টাইম আইএসআর ইন্টিগ্রেশন, সাইবার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, ত্রি-সেবা সমন্বয় এবং শিলিগুড়ি করিডোরে রাস্তাঘাট, টানেল ও রেল সংযোগ উন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত মোতায়েন সক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ভারত ‘এই অঞ্চলের উন্নয়নগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে’ এবং প্রয়োজনে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শিলিগুড়ি করিডরে ভারতের সামরিক অবস্থান কেবল শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং একটি কৌশলগত ঘোষণা উত্তর (চীন) বা পূর্ব (বাংলাদেশ) থেকে যেকোনো দুঃসাহসিকতাকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।
প্রক্সি জোট, ধূসর-জোন যুদ্ধ এবং প্রযুক্তিনির্ভর সঙ্ঘাতের এই সময় ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে শিলিগুড়ি করিডর কেবল একটি করিডর নয়, এটি এখন একটি লাল রেখা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ