রাজীব দাস
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩৫ এএম
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফের গোলাগুলি
কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হামলার পরপরই দু’দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলি শুরু হয়, যা টানা তৃতীয় রাত পর্যন্ত গড়িয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতেও দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। রোববার ভারতীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে, পাকিস্তানি সেনারা বিনা উসকানিতে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে। জবাবে ভারতীয় সেনারাও পাল্টা গুলি ছুঁড়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, পাকিস্তানি সেনারা উত্তর কাশ্মীরের তুতমারিগালি এবং রামপুর সেক্টরের বিপরীতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। যদিও পাকিস্তান এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলোও এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তানি সেনারা প্রায় নিয়মিতভাবেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গুলি ছুড়ছে। বিশেষ করে পেহেলগামের হামলার পর এই ঘটনার প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে।
ভারতীয় সেনারা বলছে, তারা ‘উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছে এবং তাদের অবস্থান থেকে ‘সতর্কতামূলক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ নিয়েছে। কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর চালানো হামলার ঘটনায় ভারতের জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। হামলায় নিহতদের অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা নিরীহ পর্যটক ছিলেন, যারা কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়েছিলেন। ফলে এই হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযোগের সুর অনেক বেশি কড়া হয়ে উঠেছে। ভারত সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে।
ভারত বলছে, হামলার নেপথ্যে পাকিস্তানের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে এবং যেকোনো ভারতীয় আগ্রাসী পদক্ষেপের জবাবে উপযুক্ত পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
পাকিস্তান বলছে, কাশ্মীর একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিরোধপূর্ণ এলাকা এবং সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের সংগ্রামকে তারা ন্যায্য বলে মনে করে।
এদিকে, ভারতীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী পেহেলগাম হামলার পেছনে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের ধরতে বড় আকারের অভিযান শুরু করেছে। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, পলাতক হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছে। তারা সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরে প্রবেশ করেছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহ করছে, হামলাকারীদের পেছনে জইশ-ই-মুহাম্মদ বা লস্কর-ই-তৈয়বার মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে। এই ঘটনার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও তলানিতে নেমেছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তে যদি এই গোলাগুলি অব্যাহত থাকে বা আরও বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটে, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানালেও এখন পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের কড়া অবস্থানে অনড় রয়েছে। বিশেষ করে কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে দুই দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগ এতটাই প্রবল যে, তা সহজে শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি বাড়তে থাকে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হবে। পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে যে কোনো সামরিক সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সবমিলিয়ে পেহেলগামে হামলার পর যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা এখন পুরো উপমহাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। একমাত্র সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে, যদিও বর্তমানে সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
রাজীব দাস
প্রকাশ : ১ দিন আগে
আপডেট : ১ দিন আগে
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফের গোলাগুলি
কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হামলার পরপরই দু’দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলি শুরু হয়, যা টানা তৃতীয় রাত পর্যন্ত গড়িয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতেও দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। রোববার ভারতীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে, পাকিস্তানি সেনারা বিনা উসকানিতে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে। জবাবে ভারতীয় সেনারাও পাল্টা গুলি ছুঁড়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, পাকিস্তানি সেনারা উত্তর কাশ্মীরের তুতমারিগালি এবং রামপুর সেক্টরের বিপরীতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। যদিও পাকিস্তান এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলোও এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তানি সেনারা প্রায় নিয়মিতভাবেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গুলি ছুড়ছে। বিশেষ করে পেহেলগামের হামলার পর এই ঘটনার প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে।
ভারতীয় সেনারা বলছে, তারা ‘উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছে এবং তাদের অবস্থান থেকে ‘সতর্কতামূলক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ নিয়েছে। কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর চালানো হামলার ঘটনায় ভারতের জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। হামলায় নিহতদের অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা নিরীহ পর্যটক ছিলেন, যারা কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়েছিলেন। ফলে এই হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযোগের সুর অনেক বেশি কড়া হয়ে উঠেছে। ভারত সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে।
ভারত বলছে, হামলার নেপথ্যে পাকিস্তানের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে এবং যেকোনো ভারতীয় আগ্রাসী পদক্ষেপের জবাবে উপযুক্ত পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
পাকিস্তান বলছে, কাশ্মীর একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিরোধপূর্ণ এলাকা এবং সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের সংগ্রামকে তারা ন্যায্য বলে মনে করে।
এদিকে, ভারতীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী পেহেলগাম হামলার পেছনে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের ধরতে বড় আকারের অভিযান শুরু করেছে। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, পলাতক হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছে। তারা সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরে প্রবেশ করেছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহ করছে, হামলাকারীদের পেছনে জইশ-ই-মুহাম্মদ বা লস্কর-ই-তৈয়বার মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে। এই ঘটনার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও তলানিতে নেমেছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তে যদি এই গোলাগুলি অব্যাহত থাকে বা আরও বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটে, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানালেও এখন পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের কড়া অবস্থানে অনড় রয়েছে। বিশেষ করে কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে দুই দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগ এতটাই প্রবল যে, তা সহজে শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি বাড়তে থাকে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হবে। পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে যে কোনো সামরিক সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সবমিলিয়ে পেহেলগামে হামলার পর যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা এখন পুরো উপমহাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। একমাত্র সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে, যদিও বর্তমানে সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ