ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন চুক্তিতে পৌঁছানোর পর তেহেরানের ওপর থেকে কীভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে ওয়াশিংটনকে তা স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে। খবর আল জাজিরা
সোমবার (২ জুন) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই এমন মন্তব্য করেন। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব দিয়েছে। তবে অযাচাইকৃত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ওই প্রস্তাবকে ইরান ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য সাত সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন একটি শান্তিপূর্ণ চুক্তির নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করছে। অন্যদিকে তেহেরান তার অর্থনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশা করছে।
যদিও ওয়াশিংটনের কাছ থেকে তেহেরান চুক্তির বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। তবে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাঘেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের স্পষ্ট নিশ্চয়তা চেয়েছেন। এছাড়া কীভাবে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দাবি করেছেন ।
তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট কিছু জানায়নি। বাঘেই তার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইরান ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করছে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন প্রতিনিধি স্টিভ উইটকভ বলেছেন, তেহেরানের অব্যাহতভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষুব্ধ এবং একে তিনি ‘রেড লাইন’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান প্রায় ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে। যদিও এটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশের কিছুটা কম, তবে পারমাণবিক জ্বালানির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি।
বাঘেই এই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। একটি দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে চাপ প্রয়োগ করছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ইরানকে সব ধরনের ইউরেনিয়াম মজুদ বন্ধ রাখার বিষয়ে বলা হয়েছে।
তেহেরান মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এটি এখনও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যদিও হোয়াইট হাউস এই প্রস্তাবকে ‘ইরানের সর্বোত্তম’ স্বার্থ বলে মন্তব্য করেছে।
বাঘেই বলেন, কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করার অর্থ এই নয় যে আমরা তা মেনে নিয়েছি।
ভোরের আকাশ/আজাসা
সংশ্লিষ্ট
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় নতুন মোড় নিয়েছে পরিস্থিতি। ইরানের হামলায় ইসরায়েলের দুইটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘মেহের’।তাসনিম নিউজের বরাতে জানা গেছে, ভূপাতিত যুদ্ধবিমানগুলোর একটির নারী পাইলটকে আটক করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই দাবি অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, তাদের কোনো বিমান ভূপাতিত হয়নি এবং কোনো সেনাসদস্য নিখোঁজ বা বন্দি হননি।এর আগে শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইসরাইলি বিমানবাহিনী ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি বড় ধরনের অভিযান চালায় ইরানে। এতে দেশটির বেশ কয়েকটি পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ কারখানা এবং সামরিক কমান্ড সেন্টারে হামলা চালানো হয়। এই অভিযানের জবাবে ইরানও হামলা শুরু করে। পালটা আক্রমণে শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তারা, যার কিছু ইসরাইলের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হানে।টাইমস অব ইসরাইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ইরানে মোসাদ এজেন্টরা গোপনে একটি ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন। সেখান থেকেই পরিচালিত হয় হামলা। এতে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায় বলে দাবি করা হয়।ইসরাইলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৮ জন নিহত এবং ৩২৯ জন আহত হয়েছেন। দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বাস্তব হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।সৌদি আরব, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে এ সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে তা পুরো অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।ভোরের আকাশ/এসএইচ
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা ইরানে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত রেখেছে। শনিবার (১৪ জুন) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ইরানে ইসরায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে দেশটির বিমান বাহিনী। তাদের উদ্দেশ্য, ইসরায়েলের জন্য সবরকম হুমকি নির্মূল করা।এর আগে, গত ১২ জুন দিনগত রাত হঠাৎ ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বিনা উসকানিতে ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে বিশ্ব। এ হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মৃত্যুকে কতটা সহজে হজম করবে ইরান তা নিয়ে চলছে নানা হিসেব নিকেষ। ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে এরই মধ্যে ইরানকে কড়া বার্তা দিয়েছে ট্রাম্প। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান ঘাটিকে যেন ইরান লক্ষ্যবস্তু না কওে সে বিষয়ে সতর্ক করেছে। কিন্তু কঠোর প্রতিশোধের বার্তা দিয়েছে এরান।এদিকে এই উস্কানির সমস্ত পরিণতির দায় ইসরায়েলি নেতৃত্বের ওপর বর্তাবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটি সতর্ক করে বলেছে এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। গতকাল এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই হামলা জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন উভয়েরই লঙ্ঘন।বিবৃতিতে বলা হয় হয়, এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ সামরিক পদক্ষেপের বিপদ সম্পর্কে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। এই উস্কানির সমস্ত পরিণতির দায় ইসরায়েলি নেতৃত্বের ওপর বর্তাবে। ১৫ জুন ওমানে শুরু হতে যাওয়া মার্কিন-ইরান পারমাণবিক আলোচনার মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে এ হামলাটি ঘটল। এর ফলে নতুন করে মার্কিন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ইসরায়েলের সহিংস কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের একটি সার্বভৌম সদস্য রাষ্ট্র, তার নাগরিক, ঘুমন্ত শান্তিপূর্ণ শহর এবং পারমাণবিক শক্তি অবকাঠামো স্থাপনার বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে সামরিক হামলা স্পষ্টতই অগ্রহণযোগ্য।মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে যে কোনো সন্দেহ ও কুসংস্কার দূর করার জন্য সংঘাত কমাতে এবং সমাধান খুঁজে বের করার জন্য কষ্টার্জিত বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল এবং পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।এতে আরও বলা হয়েছে, মস্কো পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) পদক্ষেপগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাশিয়া আশা করে, সংস্থাটি পরিস্থিতির একটি মূল্যায়ন প্রদান করবে এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলি হামলার সম্ভাব্য রেডিওলজিক্যাল পরিণতি বিশ্লেষণ করবে। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা দেশটির পারমাণবিক অবকাঠামোতে হামলার পর আইএইএ-র বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাথে যোগসাজশের অভিযোগ এনেছে।এছাড়া বিমান হামলার পর তেহরান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি সতর্ক করে দিয়েছেন, শুক্রবারের হামলার জন্য ইসরায়েলের ‘কঠোর শাস্তি আশা করা উচিত’।ইরান ও ইসরায়েলের আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা: ইরান ও ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের স্নায়ুযুদ্ধ এবার সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। চলছে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা। ইসরায়েল গতকাল শুক্রবার ভোররাতে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালাল। মধ্যপ্রাচ্যের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটির মধ্যে চলমান দীর্ঘ উত্তেজনার সাম্প্রতিকতম অধ্যায় এটি।ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ভেতরে শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এ আচমকা হামলায় ইরানের শীর্ষ তিনজন সামরিক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল।তবে শুক্রবার ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে, তা পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতি ঘটিয়েছে। এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলকে ‘চড়া মূল্য’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। দীর্ঘদিনের শত্রু ইরান ও ইসরায়েল এখন সরাসরি সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা, আক্রমণ করার ক্ষমতা ও আত্মরক্ষার উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ২০২৩ সালের ‘দ্য মিলিটারি ব্যালান্স’ প্রতিবেদন অনুসারে: ইরানের ৬ লাখ ১০ হাজার সক্রিয় সৈন্য রয়েছে।এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার, আইআরজিসিতে ১ লাখ ৯০ হাজার, নৌবাহিনীতে ১৮ হাজার, বিমানবাহিনীতে ৩৭ হাজার ও বিমান প্রতিরক্ষায় ১৫ হাজার সৈন্য। ইরানে ৬ লাখ ১০ হাজার সক্রিয় সৈন্য রয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার, আইআরজিসিতে ১ লাখ ৯০ হাজার, নৌবাহিনীতে ১৮ হাজার, বিমানবাহিনীতে ৩৭ হাজার ও বিমান প্রতিরক্ষায় ১৫ হাজার সৈন্য। এ ছাড়া ইরানের রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ১৮ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়। ইসরায়েলের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ সক্রিয় সৈন্য রয়েছে-সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ২৬ হাজার, নৌবাহিনীতে ৯ হাজার ৫০০ ও বিমানবাহিনীতে ৩৪ হাজার। তাদের রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। ১৮ ঊর্ধ্ব বয়সী অধিকাংশ নারী ও পুরুষের জন্য সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক, তবে নির্দিষ্ট কিছু ছাড় আছে।সামরিক ব্যয় : স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইরান সামরিক খাতে ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১ হাজার ৩০ কোটি) ডলার ব্যয় করেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। একই বছর ইসরায়েল ব্যয় করেছে ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৭৫০ কোটি) ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। এ খাতে ব্যয় বেড়েছে মূলত ৭ অক্টোবরের পর শুরু করা গাজা যুদ্ধের কারণে।স্থলবাহিনী : দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে: ইরানের আছে ১০ হাজার ৫১৩টির বেশি যুদ্ধ ট্যাংক, ৬ হাজার ৭৯৮টি আর্টিলারি গান ও ৬৪০টির বেশি সাঁজোয়া যান। সেনাবাহিনীর আছে ৫০টি হেলিকপ্টার এবং আইআরজিসির আছে ৫টি। ইসরায়েলের আছে প্রায় ৪০০টি যুদ্ধ ট্যাংক, ৫৩০টি আর্টিলারি গান ও ১ হাজার ১৯০টির বেশি সাঁজোয়া যান।বিমানবাহিনী : দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে: ইরানের বিমানবাহিনীর কাছে আছে ৩১২টি যুদ্ধোপযোগী বিমান, আর আইআরজিসির আছে ২৩টি। বিমানবাহিনীর রয়েছে ২টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, সেনাবাহিনীর ৫০টি এবং আইআরজিসির ৫টি। ইসরায়েলের রয়েছে ৩৪৫টি যুদ্ধোপযোগী বিমান ও ৪৩টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার।নৌবাহিনী : দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে: ইরানের নৌবাহিনীর আছে ১৭টি ট্যাকটিক্যাল সাবমেরিন, ৬৮টি উপকূলীয় টহল ও যুদ্ধজাহাজ, ৭টি করভেট, ১২টি ল্যান্ডিং শিপ, ১১টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ও ১৮টি লজিস্টিক ও সহায়ক জাহাজ। ইসরায়েলের রয়েছে ৫টি সাবমেরিন এবং ৪৯টি উপকূলীয় টহল ও যুদ্ধজাহাজ।বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা : দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে, ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আয়রন ডোম, যা সম্প্রতি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বড় অংশ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ ব্যবস্থায় একটি রাডার আছে, যা ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র, এর গতি ও দিক নির্ণয় করে। নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বিশ্লেষণ করে ক্ষেপণাস্ত্রটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পড়বে কি না। হুমকি মনে হলে ‘মিসাইল ফায়ারিং ইউনিট’ তা গুলি করে ভূপাতিত করে। প্রতিটি লঞ্চারে ২০টি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র থাকে। ইসরায়েলে ১০টি আয়রন ডোম ইউনিট রয়েছে। মধ্য ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে অন্যান্য ব্যবস্থাও আছে। ডেভিড’স স্লিং ৪০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারে। দ্য অ্যারো সিস্টেম ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম।ইসরায়েলের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ সক্রিয় সৈন্য রয়েছে- সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ২৬ হাজার, নৌবাহিনীতে ৯ হাজার ৫০০ ও বিমানবাহিনীতে ৩৪ হাজার। তাদের রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। ইরান গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটি ‘আজারাখশ’ (ফার্সি অর্থ বজ্র) নামের স্বল্প-পাল্লার ও নিচু উচ্চতায় আঘাত হানতে সক্ষম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করে। এটি ইনফ্রারেড, রাডার ও ইলেকট্রো-অপটিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে এবং যানবাহনে স্থাপনযোগ্য। ইরানের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভূমি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।এর মধ্যে রয়েছে ৪২টির বেশি রাশিয়া নির্মিত দীর্ঘ পাল্লার এস-২০০, এস-৩০০ ও স্থানীয়ভাবে তৈরি বাভার-৩৭৩; ৫৯টির বেশি মাঝারি–পাল্লার মার্কিন এমআইএম–২৩ হক, এইচকিউ–২জে ও খোরদাদ-১৫ এবং ২৭৯টি স্বল্পপাল্লার চীনের তৈরি সিএইচ–এসএ–৪ ও ৯কে৩৩১ টর-এম১ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্ট অনুসারে, ইরানের কাছে অন্তত ১২ ধরনের স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।এর মধ্যে টোন্দার-৬৯-এর পাল্লা ১৫০ কিলোমিটার, আর খোররামশহর ও সেজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। ইসরায়েলের আছে অন্তত চার ধরনের স্বল্প, মাঝারি ও মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে এলওআরএর পাল্লা ২৮০ কিলোমিটার এবং জেরিকো-৩এর পাল্লা ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার।পারমাণবিক সক্ষমতা : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই বলে মনে করা হয়। তবে তাদের একটি সমৃদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচি রয়েছে এবং দেশটি একাধিক পারমাণবিক স্থাপনা ও গবেষণাকেন্দ্র পরিচালনা করে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ২০০০-এর দশকের শুরুতে এক ফতোয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।অবশ্য গত মে মাসে ইরান সতর্ক করে জানায়, দেশটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে তারা তাদের পারমাণবিক নীতিমালা পরিবর্তন করতে পারে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান হোসেইন বাকেরি এবং ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি। তাদের মৃত্যুর পর গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে দুই র্শীষ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। শুক্রবার (১৩ জুন) পৃথক ডিক্রিতে এই দুই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে দেশটির দুই র্শীষ বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন আয়াতুল্লাহ খামেনি।ডিক্রিতে ইসরায়েলের হামলায় নিহত মেজর জেনারেল বাকেরির ও মেজর জেনারেল সালামির প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং নতুন কমান্ডারের যোগ্যতা এবং মূল্যবান অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। এছাড়া ইসরায়েলের হামলার জবাব দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা ক্রমাগত বৃদ্ধির জন্য নতুন কমান্ডারের জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।এর আগে শুক্রবার ভোরের দিকে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েল। তেহরানের বিভিন্ন আবাসিক ভবন লক্ষ্য করা হয়। এতে অনেক সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান এবং দেশটির উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হন।নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান হোসেইন বাকেরি, ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, খাতামু আম্বিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ এবং দুই পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহাম্মাদ মাহদি তেহরাঞ্চি ও ফেরিদুন আব্বাসি উল্লেখযোগ্য।ভোরের আকাশ/এসএইচ