× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বেগম খালেদা জিয়ার রাজকীয় ফেরা

এম. সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫ ০৮:৫৫ এএম

বেগম খালেদা জিয়ার রাজকীয় ফেরা

বেগম খালেদা জিয়ার রাজকীয় ফেরা

চিকিৎসা শেষে চার মাস পর দেশে ফিরে রাজসিক অভ্যর্থনা পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে ঢাকায় হয়রত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। পরে তিনি দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হন। তার দেশে ফেরার খবরে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের ঢল নামে। দেশ ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে ‘আপসহীন’ খেতাবপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার রাজসিক মর্যাদায় দেশে ফেরায় দলটির নেতাকর্মীরা এখন বেশ চাঙা ও ফুরফুরে মেজাজে।

এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার বড় পুত্রবধূ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ১৭ বছর পর নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করায় নেতাকর্মীদের মাঝে বাড়তি আমেজ যুক্ত হয়েছে। এর আগে সোমবার লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দিয়েছিল কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ এ বিমানটি।

এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলীয় চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মনোবল বেড়েছে। আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি সহায়ক হবে। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। সেই হিসেবে চার মাস পর গতকাল মঙ্গলবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সোমবার লন্ডন সময় বিকেল ৪টায় হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় খালেদা জিয়াকে বহনকারী বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। কাতারের আমিরের পাঠনো বিশেষ এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয়।

এর আগে নিজে কার চালিয়ে মা বেগম খালেদা জিয়া, স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমানকে নিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন তারেক রহমান। এ সময় তাকে বেশ অশ্রুসিক্ত ও আবেগাপ্লুত দেখা যায়। মাঝে কিছু সময় বিরতি দিয়ে দোহা বিমানবন্দর থেকে সকাল ৬টার পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ১০ টা ৪২ মিনিটে বিমানটি ঢাকায় অবতরণ করে। বিমান থেকে নামার পরপরই ভিআইপি লাউঞ্জে দলের চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। দুই পুত্রবধূসহ খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ছিলেন ১৪ জন।

দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান ছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন তার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জাফর মো. জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, খালেদা জিয়ার সহকারী মাসুদুর রহমান, মিসেস দিলারা মালিক, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. জাফর ইকবাল ও তার দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রুপা শিকদার। জোবাইদা রহমান ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে করে দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা ১১টার দিকে ব্যক্তিগত গাড়িতে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র দিকে রওনা হন বেগম খালেদা জিয়া। একই গাড়িতে সঙ্গে ছিলেন দুই পুত্রবধূও। এরপর পথে পথে নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে থাকেন তাদের প্রিয় নেত্রীকে। দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়ার আগমনে আবেগাপ্লুত বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই বিমানবন্দরের আশপাশে জড়ো হন। দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতে হাতে পতাকা হাতে নিয়ে স্লেগান দিতে থাকেন তারা। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় প্রবেশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বাসভবন ফিরোজায় পৌঁছানোর পর গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে বাসায় ঢুকেছেন তিনি।

এ সময় তার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান তাকে ধরে রাখেন এবং হাঁটতে সাহায্য করেন। তখন সেখানে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী স্লোগান দিতে থাকেন। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন পর দুই পুত্রবধূকে নিয়ে দেশে ফেরা উপলক্ষে খালেদা জিয়ার ঢাকার গুলশানের বাসভবনে বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

তিনি জানান, ‘খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বাবুর্চি এই বিশেষ ভোজের আয়োজন করেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্যারের সময় থেকে যিনি রান্না করতেন, তিনিই আজ রান্না করেছেন।’ তবে, শায়রুল কবির খান বিশেষ ভোজের মেন্যু সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, আজ বিশেষ কোনো রান্না আছে কি না, সেটা বলা যাচ্ছে না।

এদিকে, খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিমানবন্দর যান বিএনপি মহাসচিব। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন এটি নেতাকর্মীদের কাছে ভিন্ন রকম আনন্দের খবর। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেয়নি পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এখন তিনি মোটামুটি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন এতে দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের মাঝেও ভিন্ন আমেজ বিরাজ করছে। তার উপস্থিতি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

এদিকে, খালেদা জিয়ার ফেরাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বিমানবন্দর সংলগ্ন রাস্তায় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় পতাকা, ব্যানার ও খালেদা জিয়ার ছবি হাতে অবস্থান নেন। নিরাপত্তা ও যানজট মোকাবিলায় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে, তার বাসার সামনেও নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই অবস্থান করছিলেন। দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের অনেকে ঢাকায় এসেছেন।

এছাড়া ঢাকার মহানগরের দুই অংশ ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেরও ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল দলীয় প্রধানকে অভ্যর্থনা জানাতে। তাই বিমানবন্দর থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বাসা পর্যন্ত মানুষের ঢল নেমেছিল। 
বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।

২০১৮ সালে ‘কথিত’  দুর্নীতির মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাবন্দি করা হয়েছিল। ওই মামলায় সাজা দিয়ে দুই বছরের বেশি সময় নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির ওই আদেশের দিকে না তাকিয়ে আইনিভাবে মামলা মোকাবিলা করেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি ‘কথিত’ দুর্নীতির দুই মামলা থেকেই খালাস পান। যেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেসব মামলার সাজা বাতিল করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট।

এরপর খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান। ৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর সেখানে অবস্থানরত তাঁর বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তিনি। তারেক রহমানের বাসায় ফেরার পর গত দুই মাসে খালেদা জিয়াকে আর হাসপাতালে নিতে হয়নি। কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হলে দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বাসায় গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন।

এদিকে, সর্বশেষ গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর যখন খালেদা জিয়া লন্ডনে যান তখন একই ধরনের প্রপাগাণ্ডা চালানো হয়। এবারও দুই পরিবার বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস হচ্ছেন বলে গুঞ্জন ও অপপ্রচার চালানো হয়। কারণ খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা পরিবারের সবাই তখন বিদেশে। খালেদা জিয়া ও জোবাইদা রহমানের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে সেই অপপ্রচার বন্ধ হলো। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পর দলের ভেতরে ও বাইরে এবং শুভাকাক্সিক্ষদের মধ্যে ‘স্বস্তি’র পাশাপাশি ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা’ দেখা দেয়। খালেদা জিয়া দেশে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের কারণে। ইতিপূর্বে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে দুই পরিবারকে মাইনাস করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও খালেদা জিয়ার দৃঢ়তায় সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 "আমরা সাহসী জাতি, প্রতিটি রক্তবিন্দুর বদলা নেওয়া হবে" — শাহবাজ শরিফ

"আমরা সাহসী জাতি, প্রতিটি রক্তবিন্দুর বদলা নেওয়া হবে" — শাহবাজ শরিফ

 মে মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নতুন নির্দেশনা

মে মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নতুন নির্দেশনা

 মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব নেই

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব নেই

সংশ্লিষ্ট

খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানো সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন তারেক রহমান

খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানো সবাইকে ধন্যবাদ জানালেন তারেক রহমান

চাকরি ফিরে পাচ্ছেন ডা. জোবাইদা রহমান

চাকরি ফিরে পাচ্ছেন ডা. জোবাইদা রহমান

শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

আগে মৌলিক সংস্কার পারে নির্বাচন: ইসলামী আন্দোলন

আগে মৌলিক সংস্কার পারে নির্বাচন: ইসলামী আন্দোলন