আ.লীগ নিষিদ্ধের আড়ালে নাটকীয়তা চলছে: মির্জা আব্বাস
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আড়ালে নাটকীয়তা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে লাগাতার আন্দোলন নাটকীয়। কোনো অপকর্মের আগে শেখ হাসিনাও মানুষের দৃষ্টি সরাতে এমন কৌশল অবলম্বন করতেন। সোমবার (১২ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরোধিতা না করলেও একটি অজনপ্রিয় দল শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপিকে হেয় করছে। যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে চায় তারা দেশ ও জনগণের শত্রু।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, মানবিক করিডোর নামে সরকার কারোর পারপাস সার্ভ করছে। দেশ ভালো অবস্থানে নেই। মানবিক করিডোর নিয়ে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নীরবতা বিস্ময়কর। প্রশাসনে বিএনপি নিধন করে আওয়ামী-জামাতপন্থীদের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। এছাড়া ডিএমপির নিষিদ্ধ এলাকায় এনসিপির বিক্ষোভ করার ঘটনায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মির্জা আব্বাস।
ভোরের আকাশ/আজাসা
সংশ্লিষ্ট
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আড়ালে নাটকীয়তা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে লাগাতার আন্দোলন নাটকীয়। কোনো অপকর্মের আগে শেখ হাসিনাও মানুষের দৃষ্টি সরাতে এমন কৌশল অবলম্বন করতেন। সোমবার (১২ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরোধিতা না করলেও একটি অজনপ্রিয় দল শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপিকে হেয় করছে। যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে চায় তারা দেশ ও জনগণের শত্রু।বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, মানবিক করিডোর নামে সরকার কারোর পারপাস সার্ভ করছে। দেশ ভালো অবস্থানে নেই। মানবিক করিডোর নিয়ে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নীরবতা বিস্ময়কর। প্রশাসনে বিএনপি নিধন করে আওয়ামী-জামাতপন্থীদের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। এছাড়া ডিএমপির নিষিদ্ধ এলাকায় এনসিপির বিক্ষোভ করার ঘটনায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মির্জা আব্বাস।ভোরের আকাশ/আজাসা
কোনো উসকানি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনায় না জড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড. শফিকুর রহমান।সোমবার (১২ মে) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এই আহ্বান জানান।ফেসবুক পোস্টে জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশ স্বাধীনতার পর থেকে কখনো কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। সেই অবস্থা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে অনেক কিছুই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়।নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ অবস্থায় দলীয় সহকর্মীদের প্রতি আমার পরামর্শ সর্বাবস্থায় ধৈর্য, সহনশীলতা, মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল এবং ইনসাফের ওপর দৃঢ় থাকার চেষ্টা করতে হবে। কোনো উসকানি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়ানো একেবারেই ঠিক হবে না।তিনি আরও বলেন, আশা করি, সকলে বিষয়টির দিকে গুরুত্বসহকারে নজর দেবেন। মহান আল্লাহ সর্বাবস্থায় আমাদের সহায় হোন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার ইস্যুতে দলীয় অবস্থানে বিএনপির লাভ বা লোকসানের হিসেব নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। শুধুই দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে নয়, এই আলোচনা সাধারণ মানুষের মধ্যেও। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। কারণ, ছোট-বড় বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বা সংগঠন যখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে রাজপথে, তখনও বিএনপি ছিল কৌশলী অবস্থানে।অবশ্য বিএনপি নেতারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়াতেই ফ্যাসিবাদী দলটিকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ছিল। তাই, আগেই এ প্রক্রিয়াতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছিল বিএনপি। শেষ পর্যন্ত সরকারও তাদের অবস্থানের পক্ষে হেঁটেই আইনি প্রক্রিযায় এগোচ্ছে। অনেকেই বলছেন, আগামীতে ভোটের হিসেব নিকেশে বা আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় অনেক বিষয়ে মাথায় রেখেই বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা বলে দায় নিতে চাননি।এদিকে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের একদিন পর গতকাল বোববার গণমাধ্যমে পাঠানো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিলম্বে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গে যুক্ত সব সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা আনন্দিত।তিনি বলেন, আমরা গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তার হাতে দেওয়া পত্রে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছিলাম। গত ১৬ এপ্রিলও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎকালেও দেওয়া পত্রে আমরা পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিচার দ্রুত করে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। আমরা স্পষ্ট করে বলেছিলাম যে, আইনি প্রক্রিয়াতেই ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ও উচিত।এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যু ছাড়াও জাতীয় বেশকিছু ইস্যুতে আমরা বিএনপির ধোঁয়াশা অবস্থান দেখতে পেরেছি। সকালে এক নেতা বলেন এক ধরনের কথা পরে আরেকজন অন্য কথা বলায় বিভ্রান্তি তৈরি হযেছে। আওয়ামী লীগ ইস্যুতে দলটি কেন কৌশলী অবস্থানে ছিল সেটি আমি নিজেই বুঝিনি।তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলটির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান ছিল সবসময় পরিষ্কার। কিন্তু এখন আমরা সেটি দেখতে পাচ্ছি না।সিদ্ধান্তহীনতায় ইতিপূর্বে অনেক বড় দলও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশে মানুষ কী চায় সেটি যদি দলটির বর্তমান নেতাদের বুঝতে হবে।জানা গেছে, গত ৭ মে বুধবার সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এরপর বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের সূচনা হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া আবদুল হামিদ দেশত্যাগ করতে পারেননি।এছাড়া পতিত ফ্যাসিস্টের দোসরদের রক্ষায় কাজ করছেন সরকারের কেউ কেউ। এ অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি করেন তারা। ধীরে ধীরে ওই বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়ে অংশ নেন এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মাঠে নামে শাপলা চত্বর ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যসহ আহত জুলাই যোদ্ধারাও। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। ওইদিন থেকেই ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।বৃহস্পতিবার রাতভর বিক্ষোভ চলার পরদিন শুক্রবার বাদ জুমা যমুনার পাশে ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েত হয়। ডাক আসে শাহবাগ ব্লকেডের। সেদিন ঢাকার বাইরেও বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা-উপজেলায়ও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে তারাও সমানতালে নামেন সড়কে। সিদ্ধান্ত না এলে এরই মধ্যে ফের ‘মার্চ টু ঢাকা’র হুঁশিয়ারি দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ওইদিন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে জানিয়ে বিবৃতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। শনিবার শাহবাগ ব্লকেড করে আন্দোলন চালিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ সরকারকে এক ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় ফের ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। দু’দিন যখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধেও প্রশ্নে বিশেষ করে রাজধানীতে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এ আন্দোলন নিয়ে বেশ কৌশলী অবস্থানে ছিল। দলটির কোনো নেতাকে এ আন্দোলন নিয়ে কথাও বলতে দেখা যায়নি। বরং শনিবার দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ আসলে সমাধান নয়। সমস্যা মনমানসিকতার। পাকিস্তান সৃষ্টির মূল কারিগর ছিল মুসলিম লীগ। আজকে তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। জাসদও বড়দল ছিল। তারা আজ কয়েক ভাগে বিভক্ত। ভাসানী-কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন ইউপিপিও বিলীন হয়ে গেছে। জনগণের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেয় তারা এমনিতেই বিলীন হয়ে যায়। শনিবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকের ঘোষণা আসে।এছাড়া দিনভর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে এমন গুঞ্জন ছড়ানোর পর নড়ে-চড়ে বসেন বিএনপি নেতারা। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেন, পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসন চায়না জনগণ। এমনকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে করণীয় ঠিক করতে রাতে শনিবার স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকে দলটি। দলটির বৈঠক চলাকালেই সিদ্ধান্ত আসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের। সাড়ে ১০টার দিকে দলটির বৈঠক শুরু হয়ে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত চলে। বৈঠক চলাকালে রাত ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের খবর আসে।এর আগে সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।তিনি বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজ সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।এদিকে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের একদিন পর গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিলম্বে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গে যুক্ত সব সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা আনন্দিত।তিনি বলেন, আমরা গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তার হাতে দেওয়া পত্রে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছিলাম। গত ১৬ এপ্রিলও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎকালেও তার হাতে দেওয়া পত্রে আমরা পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল তাদের বিচার দ্রুত করে দেশের রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। আলোচনায় আমরা স্পষ্ট করে বলেছিলাম যে, আইনি প্রক্রিয়াতেই ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ও উচিত। বিভিন্ন সভা, সমাবেশে ও আলোচনায় আমরা আমাদের এসব দাবি বারবার উত্থাপন করেছি।আর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। গতকাল রোববার রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইজ নো মোর পলিটিক্যাল পার্টি। আওয়ামী লীগ একটা মাফিয়া পার্টি, এটা একটা ফ্যাসিবাদী দল। সুতরাং রাজনৈতিক তকমা দিতে চাই না। আওয়ামী লীগের ডিএনএতেই গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের চর্চা নেই।সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শাহবাগে কেন যাব? আমরা তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে লিখিতভাবে কয়েক মাস আগে প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি, মৌখিকভাবে বলেছি, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রেখেছি। আমাদের শাহবাগে গিয়ে এ কথা বলতে হবে কেন? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের এ খবরের পর বিএনপির অবস্থান নিয়ে শুরু হয় চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলটির কৌশলী অবস্থানে আসলে লাভ না লোকসান হয়েছে সে প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। শনিবার রাত থেকেই চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বত্র এ আলেচনা চলছে। অনেকেই বলেছেন, বিএনপি সবসময় আইন কাঠামোয় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চেয়েছে। সরকারও সে পথেই হেঁটেছে। দলটির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের হিসাব-নিকেশ ও দেশি এবং আন্তর্জাতিক নানা সমীকরণে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে বিএনপি সরাসরি দায় নিতে চায়নি। কৌশলে দলটি সবকূলই রক্ষা করেছে। সার্বিক হিসেবে দলীয় অবস্থান সঠিক ছিল। তবে, বিএনপি নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যকে অযৌক্তিক দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে আগেই বিএনপি আবেদন করে থাকলে প্রকাশ্যে সে দাবি জানাতে সমস্যা কোথায় ছিল? সরকার নিষিদ্ধ করার পর নিজেদেরকে বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে বিএনপি।বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক মো. আমিনুল হক বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ আমাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে এসেছে। এই নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সেই নির্যাতনেরই প্রতিফলন। এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতারা অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তাদের বক্তব্যের বাইরে কোনো বক্তব্য নেই।ভোরের আকাশ/এসএইচ
আনুষ্ঠানিকভাবে আজ সোমবার নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে নির্বাচনি আইন অনুযায়ী দলটি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবে। দলটির নিবন্ধন বাতিল হবে ১৯৭২ সালের ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’-এর ৯০এইচ (১) (বি) ধারার বিধান অনুযায়ী। একই সঙ্গে আরপিওর ৯০সি (১) (৩) ধারা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটিকে পুনরায় আর নিবন্ধন দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে দলীয় ব্যানারে জাতীয় সংসদসহ সকল নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে যাবে দলটি।এ বিষয়ে গতকাল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইসি এখন সরকারি গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, আজ সোমবার গেজেট প্রকাশ হলে আমরা নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব। কমিশনের আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের স্পিরিট বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।এদিকে জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে গেজেট জারি হয়েছে। আইনের দুটি ধারায় এই সংশোধনের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দল বা সংগঠন, তার অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিচারের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো সংগঠন যেমন রাজনৈতিক দল বা তার সহযোগী কোনো সত্তা যদি এ আইনের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধে জড়িত থাকে বলে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয়, তাহলে ওই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের থাকবে। এমনকি এই আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও পথ খুলে দিয়েছে সরকার। এই আইনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের দলীয় সব সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার পথ খুলেছে।অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি অনলাইনেও আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল রোববার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ তথ্য জানিয়েছেন।ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপত্রের জন্য অপেক্ষা করছি। পরিপত্র জারি হলে এসব পেজ নিষিদ্ধ করতে বিটিআরসির মাধ্যমে মেটাসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। বিটিআরসির মাধ্যমে চিঠি পাঠালে তা দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা করছি।উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বলা হয়, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।পোস্টে তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত শনিবার রাতে জরুরি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে গতকাল রোববার সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তা এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান ছিল না। এখন সেটিও করা যাবে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ সোমবার এ বিষয়ে গেজেট জারি করা হবে বলে জানা গেছে।গতকালের বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়, সন্ত্রাসী কাজ প্রতিরোধ এবং তাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। তাতে সরকার কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই।বিষয়টি স্পষ্টীকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে আইনের অধিকতর সংশোধন করা প্রয়োজন। এমন প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় বিষয় যুক্ত করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।এর আগে শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে একটি সংশোধনীও অনুমোদন করা হয়েছে। এ সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেকোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সহযোগী গোষ্ঠীকেও শাস্তির আওতায় আনতে পারবে। বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল রোববার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ কথা বলেন।ডিসি তালেবুর রহমান জানান, সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রতিদিনই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ চব্বিশের গণহত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছে।তিনি জানান, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বদা সজাগ রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দলটির নিবন্ধন বাতিলের দিকে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ সোমবার বৈঠক করে পাঁচ সদস্যের কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরেই মূলত দলটির আর কোনো কার্যক্রম নেই। প্রথম কয়েক সারির নেতাদের অধিকাংশই দেশের বাইরে, দেশের ভেতরেও অনেকে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এই অবস্থায় দলটি সব কার্যালয় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। আইনে কোনো নিবন্ধিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সক্রিয় না থাকলেও নিবন্ধন বাতিল করার কথা বলা আছে। রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ (বিলুপ্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) এলাকায় অবস্থিত দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দৃষ্টিনন্দন ভবনটির জৌলুশ এখন আর নেই। ভবনের দরজা, জানালা, ফিটিংস বিক্ষুব্ধ জনতা আগেই ভেঙে ফেলেছে। ভবনটিতে এখন ভবঘুরে, মাদকসেবীরা তাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করছে। জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলোরও একই অবস্থা।ইসি কর্মকর্তারা আরও বলছেন, নিবন্ধন পাওয়ার পর কোনো দলের সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় না থাকলেও সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান আইনে রয়েছে। অন্যদিকে সরকার যদি কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দলকে নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেতে হয়।অন্যথায় সংশ্লিষ্ট দল অন্য দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে পারলেও নিজেদের পরিচয়ে ভোটে অংশ নিতে পারে না। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়, আর সংশ্লিষ্ট আইনে নিবন্ধন বাতিলের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।আরপিও-এর ৯০ জ(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কী কারণে কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। (ক) দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেই কমিটি যদি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বা নিবন্ধন বাতিলের জন্য দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারী ব্যক্তি কর্তৃক দলীয় সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীসহ কমিশন বরাবর আবেদন করা হয়; বা (খ) নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়; বা (গ) এই আদেশ ও বিধিমালার অধীন কমিশনে প্রেরিতব্য কোনো তথ্য [একাদিক্রমে তিন বৎসর] প্রেরণ করতে যদি কোনো দল ব্যর্থ হয়; বা (ঘ) কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক [অনুচ্ছেদ ৯০খ এর দফা (১)(খ)] এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করা হয়; বা (ঙ) কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে; তাহলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে আরপিও-এর ৯০জ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফা অনুযায়ী, সরকারের নিষেধাজ্ঞা আলোকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধি করতে পারে ইসি। অন্যদিকে এই অনুচ্ছেদের (ঘ) দফা অনুযায়ীও [যা ৯০খ অনুচ্ছেদের (১)(খ) দফাতে বর্ণিত] দলটির নিবন্ধন বাতিল করা যাবে। কেননা, ওই দফায় (১)(ক) দফাও প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।আর ৯০খ অনুচ্ছেদের ১ এর (ক) এর (ই) দফায় বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয় থাকতে হবে। এছাড়া কমিশন থেকে চাহিদা মোতাবেক কোনো তথ্য পরপর তিন বছর কোনো দল না দিতে পারলে; ২০৩০ সালের মধ্যে দলের সকল স্তরের ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণ করতে না পারলে; শিক্ষক, ছাত্র, আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিকদের বা অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন করলে প্রভৃতি কারণে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য কোনো শুনানির প্রয়োজন নেই। তবে অন্য কোনো কারণে নিবন্ধন বাতিল করতে হলে সংশ্লিষ্ট দলকে শুনানির সুযোগ দেওয়ার বিধান রয়েছে আইনে। এছাড়া নিবন্ধন বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট নামে অন্য কোনো দল আর পরবর্তী নিবন্ধন পাবে না এবং নিবন্ধন বাতিলের গেজেট প্রকাশ হলে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলন চলতে থাকে সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগপর্যন্ত। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ।জুলাই অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলনের মাধ্যমে। আওয়ামী সরকার নির্বিচারে বিক্ষোভকারীদের হত্যা শুরু করলে ওই আন্দোলনে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার একদফা দাবিতে পরিণত হয়। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি আরও জোরালো হয়।এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে দিয়েই সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ছাড়ার এই দাবি আরও তীব্র হয়। পরে এনসিপি ও অন্যান্য সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং পরে শাহবাগে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জেরে অন্তর্বর্তী সরকার গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। সেসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ এবং দলটির নেতাদের বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শনিবার রাতে বলেছিলেন, পরবর্তী কর্মদিবসে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে। তবে রোববার ছুটির দিনেই ১০ মের তারিখ দিয়ে আইন সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি হলো।এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ থাকবে। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনাল আইনে যে সংশোধনী আনা হয়, সেখানে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের সুযোগও রাখা হয়। কিন্তু সংগঠনের সাজা কী, সেটি উল্লেখ করা ছিল না। একাত্তরের ভূমিকার জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করতে সে সময় আইনটি আবারও সংশোধন করবে বলেছিল শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু এক দশক ঝুলিয়ে রেখেও আওয়ামী লীগ সরকার তা করেনি। এখন ট্রাইব্যুনাল আইনে সেই সংশোধনী এনে দল হিসেবে খোদ আওয়ামী লীগের বিচারের পথ তৈরি করা হলো।ভোরের আকাশ/এসএইচ